আবদুল মান্নান, স্টাফ রিপোর্টার (খাগড়াছড়ি)-
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি কৃষি নির্ভর উপজেলা। এখানে ৭০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীণ ফল পেঁপে চাষ করেছে দেড় শতাধিক প্রান্তিক কৃষক। গত এক সপ্তাহের টানা ও ভারী বর্ষণে পেঁপে ক্ষেতে পানি জমে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। এই দুর্যোগকালীণ সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় মাঠে কৃষিবিদের আনা-গোনা শুরু হয়েছে।
সরজমিন ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কৃষি নির্ভর উপজেলার দেড় শতাধিক প্রান্তিক কৃষক এবার ৭০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীণ ফসল পেঁপে চাষ করেছেন। গত এক সপ্তাহের ভারী বর্ষণে নিচু জমির পেঁপে গাছের গোড়ায় পানি জমে পচনের আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষকের রঙ্গিন স্বপ্ন, দুঃস্বপ্নে পরিণত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে! গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার সবচেয়ে বেশি পেঁপে চাষ এলাকা ডাইনছড়ি ও সেম্প্রু পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, একরের পর একর নিচু জমিতে সৃজিত পেঁপে গাছে গাছে ফল আর ফল। কিন্ত টানা বৃষ্টির পানি পেঁপে ক্ষেতে সয়লাব হওয়ায় এখন ফলন্ত সব পেঁপে গাছ ঝিমিয়ে পড়েছে! এ সময় নতুন উদ্যোক্তা মো. হানিফ বলেন,আমি একটি বাড়ি, একটি খামারের পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে চাকরী করার পাশাপাশি নিজ জমিতে পেঁপে চাষ করে জীবন পরিবর্তনে স্বপ্ন নিয়ে ৮০ শতক জমিতে ৮২০টি হাইব্রিড পেঁপের চারা লাগিয়েছি। এতে এখন পর্যন্ত খরচ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫লাখ টাকা। প্রতি গাছে আশানুরূপ ফল ও ফুলে যখন মনে আশা জাগিয়েছিল। ঠিক সে সময়ে টানা ও ভারী বৃষ্টিতে আমার স্বপ্ন যেন অঙ্কুরেই বিনষ্ট!
সেম্প্রুপাড়া গেলে কথা হয় আরেক ফল বাগানের সফল উদ্যেক্তা মো. আবু তাহেরসহ প্রান্তিক কৃষক(পেঁপে চাষি)মো. নুর ইসলাম, মো. শামীম, মো. জমির খান, মো. আদম আলী, মো. ফারুক হোসেন ও সাহেব আলীর সাথে তাঁরা জানান, এই এলাকায় গত ৩/৪ বছর ধরে ৮০% প্রান্তিক কৃষক নিচু জমিতে পেঁপে চাষ করে সফল। ফলে এবারও পেঁপে চাষে কেউ পিছিয়ে ছিল না। নিজের জমির পাশাপাশি বর্গায় নেওয়া জমিতে কেউ ৪০ শতক, কেউ ১একর করে সর্বোচ্চ ২০ একর জমিতে পেঁপে করা হয়েছে।
এ সময় মো. আবু তাহের বলেন, আমি ২০ একর জমিতে পেঁপে লাগিয়েছি। বিগত সময়ে পেঁপে বিক্রি করে বেশ সফল হওয়ায় এবার আরও পুঁজি বাড়িয়েছি। কিন্তু বর্ষাকালের শেষলগ্নের টানা ও ভারী বৃষ্টিতে ফুল-ফলে ভরপুর গাছ এখন ঝিমিয়ে পড়েছে! এই মুহুর্তে পেঁপে বাগানে করণীয় নিয়ে ভেবে কূল পাচ্ছি না।
এই এলাকায় উৎপাদিত ফসল বিক্রির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ও জেলা পরিষদের সহযোগিতায় এখানে কাঁচা মালামাল বিক্রির কৃষিপণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র বা কালেকশন পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। এই কালেকশন পয়েন্টের সাধারণ সম্পাদক মো. ফোরকান আলী বলেন, এই সকল প্রান্তিক কৃষকের উৎপাদিত ফসল প্রতিনিধি এখানে বেচাকেনা হয়। কাউকে কষ্ট করে বাজারে যেতে হয় না। ঢাকা, ফেনীসহ সমতলের পাইকারেরা এসে ন্যায্য দামে ফল,ফলাদি কিনে নেয়। ফলে প্রান্তিক কৃষকেরা কৃষি উৎপাদন ও বাজারজাতে লাভবান হওয়ায় প্রতিনিয়ত চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, সপ্তাহের অধিক সময় উপজেলায় টানা ও ভারী বর্ষণে গ্রীষ্মকালীণ ফলমূলের বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই মুহূর্তে কৃষকের পাশে থেকে সঠিক পরামর্শ ও ওষধ ব্যবহারে কৃষকদের দ্বারে গিয়ে সেবা দিতে কৃষি কর্মকর্তা আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, উপজেলায় শুধু গ্রীষ্মকালীণ ফল পেঁপে চাষ হয়েছে ৭০ হেক্টর জমিতে। গত ৮/৯ দিনের টানা ও ভারী বৃষ্টিতে নিচু জমিতে সৃজিত পেঁপে ক্ষেতে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই মুহূর্তে প্রান্তিক কৃষকের কাছে গিয়ে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে করে কৃষকেরা ছত্রাক নাশক ব্যবহার করে গাছ ও ফসলের ক্ষতিরোধ করতে পারে।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত