দমন-পীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী শরণার্থী থেকে সরে এসে পাহাড়ের বসতি স্থাপনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লুলাইং বাঙ্গালী বাজার এলাকায় গত এক বছরে ৩০ পরিবারের অধিক রোহিঙ্গা লোকজন বসতি স্থাপন করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মুরুং জনগোষ্ঠী লোকজন। এতে করে ওই এলাকার জননিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে বলে জানান লুলাইংমুখ বৌদ্ধ বিহারের সভাপতি চিংলক মুরুং (৭০)।
সরজমিনে লুলাইং এলাকায় গেলে মেনওয়াই মুরুং, রেংদন মুরুং, চংরাইং মুরুং, মাংচং মুরুং সহ অনেকে জানান, ‘গত একবছর ধরে ৩০ এর অধিক রোহিঙ্গা পরিবার লুলাইং বাঙ্গালী বাজার এলাকায় বসতি স্থাপন শুরু করেছে। প্রভাবশালী লোকজন তাদের জায়গা-জমি ও সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রোহিঙ্গাদের এখানে বসতি গড়ে তুলতে সহায়তা করছে। প্রভাবশালীদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর এলাকার হামিদ হোসেন নামে এক দালাদের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা এখানে বসবাস শুরু করেছে। বসবাসের কিছুদিন পরে তারা স্থানীয় লোকজনের জায়গা-জমি দখলে মেতে উঠছে। ইতিমধ্যে অনেক স্থানীয় লোকের জায়গা দখল করে নিয়েছে রোহিঙ্গারা। এছাড়া রোহিঙ্গা লোকজন খুবই দাঙ্গাপ্রিয়। কথায় কথায় তারা মানুষকে মারধর করে ও খুনের হুমকি দেয়। লুলাইং বাঙ্গালী বাজার এলাকায় এডভোকেট মুকবুল হোসেন এর জমিতে কমপক্ষে ১৫ পরিবার রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে।’
লুলাইংমুখ বৌদ্ধ বিহারের সভাপতি চিংলক মুরুং বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কথায় কথায় বলে, বেশি বাড়াবাড়ি করবি তোদের খুন করে পালিয়ে যাবো। আমাদের কেউ খুঁজে পাবেনা। আমাদের পিছুটান নেই।’ লুলাইং বাজারের মুদি দোকানদার চিনওয়াই ম্রো বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে স্থানীয় লোকজন প্রায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কারণ তারা খুব অল্প টাকার (৩০০/৩৫০) বিনিময়ে দিনমজুরি করে। দ্রব্যমূল্যের যে উর্দ্ধগতি, এত অল্প টাকায় স্থানীয়রা কাজ করলে জীবিকা চলবেনা। শ্রমবাজার প্রায় এখন রোহিঙ্গাদের দখলে।’
নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে স্থানীয় লোকজন জানায়, ‘রোহিঙ্গারা পাহাড়ে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। বছর দুয়েক আগে লুলাইং মেরাইত্তা এলাকা হতে বার্মাইয়া আবুল হোসেন নামে একজনকে অস্ত্র সহ আটক করেছিল সেনাবাহিনী। এছাড়া কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠনের পক্ষে স্থানীয় লোকজন হতে চাঁদা তোলেন হামিদ হোসেন, বার্মাইয়া তারেক ও আলী আহমদ। বছর চারেক আগে সরই আমতলী এলাকায় এক রোহিঙ্গা আপন মাকে গলাকেটে হত্যা করে। সেই খুনের আসামীকে এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ। রোহিঙ্গাদের আসার এই স্রোত বন্ধ করা না গেলে পাহাড় অনিরাপদ হয়ে উঠবে।’
কথা হয় রোহিঙ্গাদের আবাসন গড়ে তুলতে সহায়তাকারী হামিদ হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ‘আপনাকে কি করতে হবে বলেন। নিউজ করা দরকার নাই। আমাদের কাজকর্ম করতে লোকজন লাগে। তাই তাদের আনা হয়েছে। আপনার সাথে এডভোকেট মুকবুল হোসেন এর ছেলে রিপন কথা বলবে।’
এদিকে অনেক রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) করে ফেলেছে। এমন একজন তারেক হোসেন। তাকে এলাকার সবাই রোহিঙ্গা হিসাবে জানে। অথচ সে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পাঁচলাইশ এলাকা থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র করেছে। স্থানীয়রা জানান, কক্সবাজার ও বান্দরবানে ভোটার হতে খুবই কড়াকড়ি হওয়ায় রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী সহ অন্যান্য জেলায় গিয়ে ভোটার হয়ে পরে লামায় স্থানান্তর করে নিচ্ছে।
সরই ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার মেনওয়াই মুরুং বলেন, ‘প্রভাবশালী লোকজনই রোহিঙ্গাদের এখানে নিয়ে আসছে। তাদের কারণে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। কয়েকজন মুরুং লোকজনের জায়গা দখল করেছে রোহিঙ্গারা। প্রভাবশালীরা তাদের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে।’
এবিষয়ে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম শেখ বলেন, ‘লামা থানা কর্তৃক ইতিমধ্যে অনেক রোহিঙ্গাকে ধরে শরণার্থী ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। লুলাইং এর বিষয়ে জানা ছিলনা। উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, ‘বিষয়টি উদ্বেগজনক। জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে রোহিঙ্গাদের দুর্গম পাহাড় থেকে অপসারণ করতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত