যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সাথে যুক্ত হতে অনেক দিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিন্তু বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) মার্কিন কর্তৃপক্ষ ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত না করায় ফ্লাইট শুরু করা যাচ্ছে না।
তবে সম্প্রতি বেবিচক চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিমান মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে সময়মতো আবেদন না করায় ফ্লাইট চালু করা যাচ্ছে না। সংস্থাটি আশা করছে, এ বছরের মধ্যেই ফ্লাইট চালু করা যাবে।
বেবিচককে এখনও ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত করেনি মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি (এফএএ)। তাহলে বিমান কীভাবে ফ্লাইট শুরুর আবেদন করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশটিতে ফ্লাইট শুরুর পূর্বশর্ত হলো, বেবিচককে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হতে হবে। এর পর বাংলাদেশের বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইট শুরুর জন্য স্লট পেতে আবেদন করতে পারবে।
একসময় নিয়মিত ঢাকা থেকে নিউইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনা করত বিমান। ২০০৬ সালে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশকে ক্যাটাগরি-২ এ অবনমন করে দেশটির আকাশপথের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফএএ । এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান সে সময় ব্যবহার করত মার্কিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাকডোনাল্ড অ্যান্ড ডগলাসের তৈরি ডিসি-১০ মডেলের উড়োজাহাজ।
ম্যাকডোনাল্ড অ্যান্ড ডগলাস তাদের সবশেষ ডিসি-১০ উড়োজাহাজ তৈরি করে ১৯৮৮ সালে। এর পর এটি মার্কিন আরেক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সাথে একীভূত হয়ে যায়। এফএএ যুক্তরাষ্ট্রে ২০ বছরের পুরোনো উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় না।
মার্কিন কর্তৃপক্ষের তালিকায় বাংলাদেশের অবনমনের ফলে সে দেশে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ হারায় বিমান। ক্যাটাগরি-১ এর মর্যাদা পুনরুদ্ধারে বেশ কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা চলছে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের কাছ থেকে ১২টি নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজও কিনেছে বিমান। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের।
এর মধ্যে এফএএ কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বাংলাদেশ সফর করেছেন। নিরীক্ষা করেছেন বিমান ও বেবিচককে। কিন্তু সেসব নিরীক্ষায় সংস্থাটি কী পেয়েছে, তা প্রকাশ্যে জানানো হয়নি। অবশ্য বেবিচকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইতিবাচক তথ্য পাওয়ার কথা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই অক্টোবরের মধ্যে আমরা নিউইয়র্ক ফ্লাইট শুরু করতে চাই। এটা আমাদের লক্ষ্য ছিলো। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম। সিভিল এভিয়েশন কিন্তু প্রক্রিয়ার প্রথমে নয়। এয়ারলাইন্সকেই কিন্তু আগে আবেদন করতে হয়। এয়ারলাইন্স এখানে বিমান। বিমান কিন্তু আবেদনটা করতে দেরি করে ফেলেছে। বিমানকেও আমরা বলেছি, তারা আবেদন করতে দেরি করে ফেলেছে। আমরা লিখিতভাবে তাদের জানিয়েছি যে, তারা এ প্রক্রিয়াটা করতে দেরি করে ফেলেছে।’
অবশ্য এ বছরের মধ্যেই ফ্লাইট শুরু করা যাবে বলে আশাবাদী বেবিচকের এ শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘তারা বিলম্বে আবেদন করেছে। কোভিডের কারণেও কিছুটা পিছিয়েছে এ প্রক্রিয়া। তবে আমি এ বছরেই নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আশাবাদী।’
অবশ্য এফএএ বেবিচককে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত করেছে-এমন কোনো তথ্য তিনি জানাননি।
বিমান বোয়িংয়ের কাছ থেকে যে উড়োজাহাজগুলোর কিনেছে, তার মধ্যে আছে দুটি বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন, চারটি বোয়িং ট্রিপল সেভেন, আর ছয়টি বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। এর মধ্যে ট্রিপল সেভেন ও ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজগুলো একটানা ১৬ ঘণ্টার বেশি উড়তে সক্ষম। নিউইয়র্কে ফ্লাইট শুরুর অনুমতি পাওয়া যাবে এ আশা করেই এই উড়োজাহাজগুলো কেনা হয়েছিল।
বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, ‘ফ্লাইট শুরু করতে সবার প্রথমে বেবিচকের দায়িত্ব হলো ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হওয়া। কিন্তু এমনটা হয়েছে বলে আমরা কেউই জানি না। বেবিচকও কখনো বলে নাই যে, তারা মার্কিন মানে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হয়েছে। তাহলে বিমান কীভাবে আবেদন করবে? যতক্ষণ বেবিচকের মানে পরিবর্তন না আসছে, ততক্ষণ বাংলাদেশের কোনো এয়ারলাইন্স যুক্তরাষ্ট্রে স্লটের জন্য আবেদনই করতে পারবে না। কিন্তু বেবিচক চেয়ারম্যান এটা কোন পার্সপেকটিভে বলছেন, এটা স্পষ্ট নয়।’
একই মত দিয়েছেন আরেক এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলামও। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই তো বিমান ফ্লাইট শুরুর চেষ্টা করছে। তারা কোন সময়ের মধ্যে আবেদন করেনি? এটা কি শেষ অডিটের পরে? আমার কাছে বিষয়টি পরিস্কার নয়। এটা তিনি (বেবিচক চেয়ারম্যান) কীভাবে বলছেন?’
অবশ্য এর মধ্যে ২০১৪ সালে একবার ভাড়ায় আনা উড়োজাহাজ দিয়ে নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল বিমান। বিমানের সেই সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন স্টিল এক সংবাদ সম্মেলনে টিকিট বিক্রির ঘোষণাও দিয়েছিলেন। তার আগের বছর; অর্থাৎ, ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিমান চলাচলে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। তারপর অবশ্য সে উদ্যোগ আর এগোয়নি।
অবশ্য বিমান নিউইয়র্কে যেতে না পারলেও কানাডার টরন্টোতে ফ্লাইট শুরুর মাধ্যমে উত্তর আমেরিকার সাথে আকাশপথে এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছে। রুটটি বর্তমানে বিমানের লাভজনক রুটগুলোর একটি। এ বছরের সেপ্টেম্বরে জাপানের নারিতায় ফ্লাইট শুরু করতে যাচ্ছে এয়ারলাইন্সটি।
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/এমএস