পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি’র) স্থায়ী কমিটির “সাংবাদিক সম্মেলন” এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান সমস্যা নিরসনে ১৭ দফা ঘোষণা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি'র) কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান।
উক্ত সংবাদ সম্মেলন ১৫ জুলাই শনিবার দুপুরে বান্দরবানের পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্রাবাস চত্বর, মুসাফির পার্কে অনুষ্ঠিত হয়।
কাজী মজিবর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রিয় জাতির বিবেক সাংবাদিকবৃন্দ,
আপনাদের সবাইকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
বান্দরবান জেলার জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে সরকার ও দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান রাজনৈতিক সংকট ও সন্ত্রাসী বিচ্ছিন্নতাবাদী রাষ্ট্রদ্রোহী সংগঠন, জেএসএস, ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ(সংস্কার) ও কেএনএফ নিজ দেশের ভেতরে পরিচালিত রাষ্ট্রদ্রোহীতামূলক কর্মকান্ড, সেনাবাহিনীসহ সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী এবং জনসাধারণের উপর প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে আক্রমণ ও হত্যাযজ্ঞ চালানো, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, গরীব অসহায় নাগরিকদের নিজ ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে তারা সেনাসদস্য হত্যা, অপহরণ ইত্যাদি অব্যাহত রেখেছে। ফলে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে। তাই আজ, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ আপনাদের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের ষড়যন্ত্র ও তৎপরতা দমনে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাদি সম্পর্কে পিসিএনপি’র অবস্থান, দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত তুলে ধরছি।
প্রিয় দেশপ্রেমিক সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আপনারা জানেন গোটা বিশ্ব এখন বদলে যাচ্ছে, বদলাচ্ছে বিশ্বের নানা রীতিনীতি নিয়ম-কানুন। চলছে বিশ্বব্যাপী দিন বদলের পালা। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তেমনিভাবে বদলেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতি সম্প্রদায়ের জীবনমান। ঠিক তার বিপরীতে একই এলাকায় বসবাস করা বাঙ্গালীদের ভাগ্য কি বদলেছে....? নানান ধরনের বৈষম্যের স্বীকার হয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের বাঙ্গালী পরিবার সমূহ। একদিকে উপজাতি পরিবারগুলো রাষ্ট্রীয় যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, অপরদিকে ঠিক তার বিপরীতে বাঙ্গালী পরিবারগুলো তা পাচ্ছেনা। একটি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই যুগের রক্তাত্ত বিদ্রোহের অবসান ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় আওয়ামীলীগ সরকার ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি অসম চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সেই চুক্তির ফলে পার্বত্য উপত্যকায় বসবাসরত বাঙ্গালীদের সাংবিধানিক অধিকার তথা তাদের ন্যায্য মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে উপজাতি সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে চরমভাবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু অনিবন্ধিত সংগঠন জেএসএস, ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ(সংস্কার), মগপার্টি(এমএলপি) ও কেএনএফ সহ তাদের অন্যান্য সংগঠন প্রতিনিয়ত নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। গুম, হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ সহ বর্বরতম সব ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে বাঙ্গালীদের উপর। এসব বর্বরতায় এবং অত্যাচারে বাঙ্গালীরা হারাচ্ছে তাদের ভিটেমাটি, এমনকি অনেকে হারাচ্ছে তাঁজা প্রাণ। ১৯৯৭ সালে চুক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এসব অত্যাচার চলে আসছে। আমাদের বাংলাদেশ সহ বিশে^র বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় ও পত্রপত্রিকায় যেভাবে উপজাতীয়দের অনগ্রসর, পশ্চাদপদ ও অসহায় চিহ্নিত করে একচেটিয়া সুযোগ-সুবিধা শুধুমাত্র উপজাতিদের জন্য উন্নয়ন কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে। যদিও তারা বর্তমানে ততোটা পশ্চাদপদ নহে। বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক বামপন্থী বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা শুধুমাত্র উপজাতিদের অধিকার, পশ্চাদপদতা, অসহায়ত্বতা নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ সহ সারা বিশে^র কাছে উপস্থাপন করছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিরা অনগ্রসর। কিন্তু তার বিপরীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের দূর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোতে যেসব বাঙ্গালী পরিবার উপজাতিদের চেয়ে অনেক বেশি অনগ্রসর, পশ্চাদপদ ও বৈষম্যের স্বীকার তা নিয়ে কোন গবেষণা নেই, নেই কোন রিপোর্ট। বাস্তবিকভাবে দেখা যায় উপজাতিরা বর্তমানে মোটেও পশ্চাদপদ নহে। প্রত্যক্ষভাবে দেখা যায় নেতৃত্বে, কর্তৃত্বে, ক্ষমতায়, সুযোগ-সুবিধায় ও ধনদৌলতে সর্বক্ষেত্রে উপজাতিদের দখলে। তারা বাংলাদেশের অন্যসব জেলার মানুষের চেয়ে অনেক উন্নত জীবন-যাপন করছে। শিক্ষা, চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্যে সর্বক্ষেত্রে তারা বাঙ্গালীদের চেয়ে বহুগুণ এগিয়ে রয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত হাজার হাজার উপজাতি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, সেনা অফিসার, বিচারক, পুলিশ কর্মকর্তা, সাধারণ প্রশাসনে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, ব্যাংকার, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিদেশী দূতাবাস ও সংস্থায় কর্মকর্তা রয়েছে। বিপরীত দিকে পার্বত্য অঞ্চলের বাঙ্গালীরা হাজার থাক দূরের কথা শতের কোটাও পার হতে পারেনি। যদিও বাঙ্গালীরা এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের চেয়েও বেশী এবং উপজাতিদের তুলনায় দক্ষ।
লক্ষ্য করলে দেখা যায় বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে অষ্টম শ্রেণী পাশ বেকার উপজাতি যুবক/যুবতী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অথচ একই অঞ্চলে বসবাসরত উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হাজার হাজার বাঙ্গালী যুবক/যুবতী বেকার হয়ে দেশ ও অর্থনীতির বোঝা হয়ে রয়েছে। অগ্রাধিকারের নামে একচেটিয়া উপজাতীয় অদক্ষ যুবক নিয়োগের ফলে বঞ্চিত হচ্ছে বাঙ্গালী শিক্ষিত ও দক্ষ যুবকেরা। ১৯৭৬ সালের পর থেকে অস্ত্রের মুখে চাপ প্রয়োগ করার মাধ্যমে যেকোন প্রতিষ্ঠান একচেটিয়া পাহাড়ি যুবকদের নিয়োগ দিতে বাধ্য করছে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংহতি সমিতি তথা জেএসএস, ইউপিডিএফ ও তার অন্য সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেকোন সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে চাকুরীরত পার্বত্য বাঙ্গালী কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একদিকে সরকারের তরফ থেকে দেওয়া উপজাতি অগ্রাধিকার কোটা অন্যদিকে আঞ্চলিক পরিষদের চাপ প্রয়োগ এবং তাদের অস্ত্রের ব্যবহারে চলছে প্রতিনিয়ত সুবিধা আদায়ের কৌশল। ১৯৮৪-৮৫ সালে একসাথে ৫০০ জন উপজাতি যুবককে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন সরকারের বিশেষ ক্ষমতা বলে একসাথে চাকুরি দেওয়া হয় ১৮৭৭জন উপজাতি যুবককে। শুধুমাত্র পার্বত্য তিনটি জেলা হতে এই বিশাল সংখ্যক নিয়োগ বাংলাদেশে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু সে সকল নিয়োগের ক্ষেত্রে বাঙ্গালীরা উপেক্ষিত থেকেছে সবসময়। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের শুরুতেই শান্তিবাহিনীর ৭১জন ক্যাডারকে চাকুরীতে পুনর্বহাল করা হয়, ৭০৫ জন উপজাতি শান্তিবাহিনী যুবককে পুলিশ বাহিনীতে, ১০জনকে সার্জেন্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ঠিক একইভাবে পার্বত্য চুক্তির আগে ও পরে হাজার হাজার সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে উপজাতীয়দের নিয়োগ দিয়েছে সরকার। যার মধ্যে একজন বাঙ্গালীও ছিলোনা।
প্রিয় দেশপ্রেমিক কলম সৈনিক ভাইয়েরা,
২০২২সালের জনশুমারীর প্রতিবেদন মতে তিন পার্বত্য জেলার তথা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান জেলার মোট জনসংখ্যা ১৮,৪২,৮১৫ জন। এর মধ্যে বাঙ্গালী ৯,২২,৫৯৮ জন যার আনুপাতিক ৫০.০৬%। অন্যদিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৯,২০,২১৭ জন যার আনুপাতিক ৪৯.৯৪%। ২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে তিন পার্বত্য জেলায় মুসলিম ৮,২০,৪৯৮ জন যার আনুপাতিক (৪৪.৫২%), বৌদ্ধ ৭,৬৯,২৭৯ জন যার আনুপাতিক (৪১.৭৪%), হিন্দু ১,৬৯,০৯৬ জন যার আনুপাতিক (৯.১৮%), খ্রিষ্ঠান ৬০,০২৮ জন যার আনুপাতিক (৩.২৬%) এবং অন্যান্য ২৪,০৩৪ জন যার আনুপাতিক (১.৩০%)। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মোট জনসংখ্যার ৫০.৬% বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সরকারিভাবে সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং বৈষম্যের শিকার হয়ে বসবাস করছে। যার উদাহারণ সর্বশেষ উন্নয়ন বোর্ড ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক শিক্ষাবৃত্তিতে তিন পার্বত্য জেলায় বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে ২৩% ও উপজাতি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে ৭৭% শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন চাকুরীতে উপজাতিদের জন্য উপজাতি কোটা রয়েছে কিন্তু ৫০.৬% বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী হওয়া সত্তে¡ও বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীদের কোন কোটা নাই।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আপনারা জানেন পাহাড়ে নব সৃষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেএনএফ আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রকেই আলাদা বা বিচ্ছিন্ন করার স্বপ্ন দেখছে। পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম পরিবেশের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা অস্ত্র প্রশিক্ষণ সহ নানাভাবে নিজেদের গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন ইস্যুতে রাষ্ট্র, সরকার বা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের প্রপাগান্ডা চালাতে শক্তিশালী গ্রæপ গড়ে তুলেছে। বেশ কিছু পাহাড়ী অনলাইন সাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে তারা এসব কাজে ব্যবহার করছে। এমনকি তারা নিজেদের সক্ষমতা ও শক্তি জানান দিচ্ছে সর্বশেষ ৫ জন সেনাবাহিনীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি’র) কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মোঃ মজিবর রহমান, পিসিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মানবধিকার কর্মী এম. রুহুল আমিন, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও পার্বত্য নিউজের সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশকে ঠধ ঞব কঁশর ফেইসবুক ফেইজ থেকে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) হেডকোয়ার্টারস এর ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং এর জঘন্য মিথ্যাচার, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় প্রদত্ত বিবৃতি এবং অপপ্রচার করে সামাজিক মর্যাদা ও সম্মান জনসম্মুখে হেয়প্রতিপন্ন করে। তাই এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ ও জঘন্য মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানািেচ্ছ।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি)পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান জাতীয় সমস্যা সমাধানে জনগণের দাবী সমূহ সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের কাছে তুলে ধরছি। যেমন-
১. পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে একজন সেনা কর্মকর্তা/বাঙ্গালী চেয়ারম্যান নিয়োগ করে শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে বৈষম্যহীন সমতা সৃষ্টি করা।
২. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক ধারাসমূহ বাতিল, সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন করে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সংকট সমূহ সমাধানকল্পে প্রতিপক্ষদের নিয়ে সংলাপ এর আয়োজন করা।
৩. পার্বত্য চট্টগ্রামের বিতর্কিত ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন ও সংবিধান পরিপন্থী ধারা সমূহ বাতিল ও সংশোধন করা।
৪.পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জেএসএস, ইউপিডিএফ (সংস্কার), কেএনএফ, মগলিবারেশন পার্টি (এমএলপি) সহ সকল সহযোগী সন্ত্রাসী জঙ্গী গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাদের দমনে পাহাড়ে সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রাখা। সেই সাথে সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা, ক্ষমতা ও দুর্গম পাহাড়ী এলাকাতে প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যাম্প পুণ:স্থাপন, নতুন নতুন সেনাক্যাম্প স্থাপন করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে একটি সেনাবাহিনীর পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা।
৫.জরুরী ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১০৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে প্রতি এক কিলোমিটার পর পর বিজিবি’র বিওপি স্থাপন করা।
৬.সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চলমান ভূমি বিরোধ নিরসনে ডিজিটাল ভূমি জরীপ (সিএস) চালু ও সম্পন্ন করা এবং জরুরী ভিত্তিতে ভূমিহীনদের মাঝে ভূমি বন্দোবস্তী চালু করা।
৭. পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ কর্তৃক শিক্ষাবৃত্তিতে বাঙ্গালী ও উপজাতিদের সমান অনুপাতে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা।
৮.তিন পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারি চাকুরী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে উপজাতি কোটার পরিবর্তে জনসংখ্যার অনুপাতে পার্বত্য কোটা চালু করা।
৯. স্থায়ী বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে সার্কেল চীফ সনদ প্রথা (রাজার সনদ) বাতিল করে সমতল জেলা সমূহের ন্যায় ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র অথবা বিশেষ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থায়ী বাসিন্দার সনদ প্রদান করা।
১০. বাজার ফান্ডের জায়গায় আবাসিক ও ব্যবসায়ীক ভবন নির্মাণে ব্যাংক ঋণ চালু করা।
১১. পার্বত্য জেলা সমূহে জেলা জজ আদালতে পারিবারিক আদালত চালু করে নির্যাতিত মহিলাদের সুবিচার নিশ্চিত করা।
১২. পার্বত্য জেলা সমূহে শান্তিবাহিনী কর্তৃক গণহত্যার স্থানসমূহ সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার সমূহকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং নিহত ব্যক্তিদের শহীদের মর্যাদার স্বীকৃতি প্রদান করা।
১৩. ঢাকাস্থ পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স এ বাঙ্গালীদের জন্য উপজাতিদের ন্যায় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা।
১৪. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও বিভিন্ন আইনে বাঙ্গালীদের অ-উপজাতী আখ্যায়িত করে বাঙ্গালীদের সম্মান ও মর্যাদা হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। অবিলম্বে এই আইন সংশোধন করে বাঙ্গালীদেরকে বাঙ্গালী হিসেবে আখ্যায়িত করতে হবে।
১৫. সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পার্বত্য জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় উপজাতি ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যায় বাঙ্গালী ছাত্রাবাস চালু করতে হবে।
১৬. পার্বত্য জেলাসমূহে দেশী-বিদেশী পর্যকটদের আকৃষ্ট করার জন্য পর্যটন স্পটসমূহ সংরক্ষণ, শিল্পের বিকাশ ও সরকারি পৃষ্টপোষকতা এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
১৭. পার্বত্য চট্টগ্রামে বেকার যুব সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন ফলজ-বাগান, রাবার বাগান, মৎস খামার, গবাদি পশু খামার, বনায়নসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় সরকারিভাবে পৃষ্টপোষকতা প্রদান।
পরিশেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ উপস্থিত সম্মানিত জাতির বিবেক সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে আমাদের জনগণের উল্লেখিত দাবীসমূহ সরকারকে জনস্বার্থে সদয় বিবেচনাসহ বাস্তবায়নের জন্য আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। আপনারা অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করে আমাদের আহবানে সাড়া দিয়েছেন সেই জন্য আপনাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞ জানাচ্ছি।
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/এমএস
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত