নির্বাচন এগিয়ে আসলেও নিজেদের অবস্থানে এখনও অনড় বড় দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এরমধ্যে গত বুধবার খুব নিকট অবস্থানে আলাদা আলাদা সভা করেছে দুই দলই। অনেক আশঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ন ভাবেই শেষ হয়েছে সমাবেশ।
১০ ডিসেম্বরের পর রাজধানীতে এটিই ছিলো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সবচেয়ে বড় শোডাউন। নয়া পল্টন আর গুলিস্থান, মাত্র দেড় কিলোমিটারের মধ্যে হয় দুই দলের এ সমাবেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সফরের মধ্যেই সমাবেশ যেন ছিলো শক্তিমত্তা দেখানোর প্রতিযোগিতা।
সমাবেশ থেকে দুই দলই একদফা ঘোষণা করেছে। নামে মিল থাকলেও দুই দলের একদফা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। বিএনপি তাদের এক দফায় সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ তাদের এক দফায় বলছে, নির্বাচন হবে শেখ হাসিনার অধীনেই।
এই পরস্পর বিরোধী অবস্থানেই স্পষ্ট নির্বাচন নিয়ে দুই দল আগ্রহ দেখালেও তাদের নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তাদের মধ্যে যে মতভেদ তা এখনও কাটে নি। খুব সহসা যে এটি কাটবে এমন আভাসও নেই।
সমাবেশের পর বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, তাদের সরকার পতন আন্দোলনে জনসমর্থন বেড়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই বিএনপি এত বড় সমাবেশ করতে পারছে।
বিএনপির সমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের দাবি, দলের নেতা-কর্মীরা ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। পাশাপাশি নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সুস্পষ্ট বার্তাও দিয়েছে।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘এই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনটি সংবিধান সম্মত ভাবেই হতে হবে। তারা নির্বাচন শুধু না করা না, নির্বাচন ভন্ডুলও করতে চায়। এবং দেশে এক ধরনের একটা অন্ধকার গলিপথ দিয়ে অন্য কোনো অপশক্তি পথ করে নিতে চায়। তাদের লেজুরবৃত্তি করে বিএনপি ক্ষমতার হালুয়া রুটি ভাগ বাটোয়ারা করতে চায়।’
অন্যদিকে, বিএনপি নেতারা বলছেন, বুধবারের এক দফা কর্মসূচির ঘোষণায় মানুষের প্রত্যাশা পুরণ হয়েছে। জনগণ সরকার পতন দেখতে মরিয়া বলেও মত তাদের।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জনগণ যেটা শুনতে চায় যে আগামী নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারবে, কি করে পারবে? সেটা একমাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের মাধ্যমে সম্ভব। কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, আ্মি মনে করি আগামী দিনের সংগ্রামের জন্য আন্দোলনের জন্য তারা তৈরি হয়ে গেছে।’
বর্তমান একাদশ সংসদের মেয়াদ প্রায় শেষ। এ বছরের নভেম্বর থেকে আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। নির্বাচন কমিশনও জানিয়েছে ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে হতে পারে নির্বাচন।
তবে দুই দলের অনড় অবস্থানে, নির্বাচন ঘিরে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা সহসা সমাধানের পথ দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তাদের আশঙ্কা নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে অহিংসার রাজনীতি আর নাও থাকতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি দলও চাচ্ছে এটা অবাধ হোক এবং বিরোধী দলও চাচ্ছে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। যদিও এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের মাধ্যমগুলো ভিন্ন। যে অস্ত্রগুলো তারা প্রয়োগ করছে তাতে সে অর্থে কোনো সমঝোতা নেই। তবে সাংঘর্ষিক অবস্থান যদি অব্যাহত থাকে এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি হয় তাহলে কিন্তু সেটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেও করতে পারে।’
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও দেশে অনেকটা এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো। সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। শেষ পর্যন্ত তাদের সে দাবি শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ মেনে নেয় নি। ফলে সেই নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি।
শুধু বর্জনই করে নি, নির্বাচনের আগে ও পরে সারাদেশে ব্যাপক ভাংচুর ও জ্বালাও পোড়াও করে বিএনপি ও তাদের জোট সঙ্গী জামায়াত। বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় আগুনে পুড়ে অনেক সাধারণ মানুষেরও প্রাণ যায়।
বিএনপির বর্জনের সেই নির্বাচনে নিজেদের জোট সঙ্গী জাতীয় পার্টিকে নিয়ে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে আর বিরোধী দলের ভূমিকায় যায় জাতীয় পার্টি। সেই সরকারে জাতীয় পার্টির কয়েকজন সংসদ সদস্যকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী করা হয়।
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/এমএস
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত