মাসুদ রানা, বিশেষ প্রতিনিধি:
পবিত্র ঈদুল আজহায় যাতায়াতে দেশে সড়ক, রেল ও নৌ পথে মোট ৩১২টি দুর্ঘটনা হয়েছে। এতে ৩৪০ জন নিহত ও ৫৬৯ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতি।
বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
মোজাম্মেল হক বলেন, এবারের ঈদে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ কম যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৪ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো ছিল। ঈদের ছুটি একদিন বাড়ানোর সুফল মিলেছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঈদযাত্রা শুরুর দিন ২২ জুন থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ৬ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত ও ৫৪৪ জন আহত হয়েছে। রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১০টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, আহত ১৫ জন ও ৬ জন নিখোঁজ হয়েছে। ২০২২ সালের ঈদুল আজহায় চেয়ে এবারের ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৩৩ দশমিক ১১ শতাংশ, আহত ৪২ দশমিক ২৭ শতাংশ কমেছে।
সংগঠিত সড়ক দুর্ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৩ দশমিক ০৫ শতাংশ ট্রাক, পিকআপ ভ্যান-কাভার্ডভ্যান, ১৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ বাস, ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস-জিপ, ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা ও ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এসব দুর্ঘটনা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী এবারের ঈদে দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও কভার্ডভ্যান। ঈদযাত্রায় ৮৮টি ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, কভার্ডভ্যান দুর্ঘটনায় ৯৩ জন নিহত, ১৯৩ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, নিহতের ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ এবং আহতের ৩৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রায়। পাশাপাশি ৯১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৯৪ জন, আহত ৭৭। যা মোট দুর্ঘটনার ৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, নিহতের ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, আহতের ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।
সংগঠনটি বলছে, এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় ৮২ জন চালক, ৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩৫ জন পথচারী, ৪৭ জন নারী, ২৫ জন শিশু, ১৭ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৪ জন শিক্ষক, ৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৯ দশমিক ২৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৯ দশমিক ৬০ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ১ দশমিক ৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে সংগঠিত হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নজরদারির কারণে এবারের ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, কিছু কিছু সড়কের অবস্থা ভালো হওয়ায় এ সকল রুটে ভোগান্তি কমার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ কমেছে, প্রাণহানিও কমেছে ৩৩ দশমিক ১১ শতাংশ।
তবে পরিকল্পনার গলদে উত্তরাঞ্চলের পথে যানজটের ভোগান্তির পাশাপাশি কিছু কিছু রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য হলেও কর্তৃপক্ষ বরাবরের মতো দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলে দাবি মোজাম্মেল হকের।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক ক্যান্সারের মতো বেড়ে যাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার মহামারি চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, সমাজকর্মী মোহাম্মদ মহসিন প্রমুখ।
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/রনি
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত