মাসুদ রানা, বিশেষ প্রতিনিধি:
বাংলা ভাষার ভিত্তি বা প্রাণ হচ্ছে বাংলা বর্ণমালা। কথা বলার জন্য আমরা যে শব্দ তৈরি করি তা এই বর্ণমালার হাত ধরেই। আবার এই বর্ণমালা দিয়েই বুঝানো হয়ে থাকে নানান ধরণের সাংকেতিক অর্থ। যেমন গাড়ির নাম্বার প্লেটের বর্ণগুলো দিয়ে বুঝানো হয় বিভিন্ন ধরণের গাড়ির শ্রেণীবিভাগ।
আপনার যদি একটি গাড়ি থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবে সেই গাড়ির সামনে ও পিছনে নাম্বারপ্লেট লাগানো আছে। আর যদি গাড়ি না-ও থাকে তাহলে নিশ্চয়ই প্রতিদিন চলতে ফিরতে যত গাড়ি দেখেন, সেই সব গাড়ির নাম্বার প্লেটে বর্ণসহ নাম্বার নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন।
প্রতিটি গাড়ির নাম্বার প্লেট অনেকটা একইরকম দেখতে হলেও সেগুলোর নাম্বার কিন্তু আলাদা। যেমন- ঢাকা মেট্রো ক ১১-১২৩৪, ঢাকা মেট্রো খ ৩১-২৩৪৫ ইত্যাদি ইত্যাদি। এখানে- ঢাকা মেট্রো বলতে যে গাড়িটি ঢাকা মেট্রোপলিটনের আওতাধীন তা সহজেই অনুমান করা যায়। পরবর্তী ‘১১’ হচ্ছে গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার এবং ‘১২৩৪’ হচ্ছে গাড়ির সিরিয়াল নাম্বার।
কিন্তু শহরের নাম আর সংখ্যার মাঝে একটা বাংলা বর্ণও জুড়ে দেয়া হয় গাড়ির নাম্বার প্লেটে। এই বর্ণ দিয়ে ঠিক কী বুঝানো হয়, তা কি কখনও ভেবে দেখেছেন? অনেকেই গাড়ির নাম্বার প্লেটে বাংলা বর্ণ’র অর্থ হয়ত জেনে থাকবেন। আর না জানলেও ক্ষতি নেই। চলুন জেনে নেয়া যাক এই বর্ণর মাধ্যমে গাড়ির নাম্বার প্লেট কী প্রকাশ করে থাকে।
বর্ণগুলোর অর্থ কী তা জানার আগে জানতে হবে বাংলাদেশে গাড়ির নাম্বার প্লেট কারা এবং কীভাবে ঠিক করে দেয়। আপনি যখন একটি গাড়ি কেনেন, তখন গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হয়। আর গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করতে হয় বাংলাদেশ রোডস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি বা বিআরটিএ থেকে।
বিআরটিএতে কোন গাড়ির রেজিস্ট্রনের জন্য আবেদন করা হলে, তাদের ফর্মে গাড়ির তথ্যগুলো জমা দিতে হয়। গাড়ির তথ্য দেয়ার পর আপনার গাড়িটি কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে বিআরটিএ তা নির্ধারণ করে গাড়িটির একটি নাম্বার প্রদান করে থাকে।
ক্যাটাগরি অনুসারে গাড়ির নাম্বার নির্ধারণ করার জন্য বিআরটিএ’র একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট রয়েছে। ফরম্যাটটি হল-
শহরের নাম- গাড়ির ক্যাটাগরি- গাড়ির নাম্বার।
এই ফরম্যাটের মাঝের অংশে গাড়ির ক্যাটাগরি বুঝাতেই বাংলা বর্ণগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এবার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, তাহলে কোন বর্ণ দিয়ে কোন ক্যাটাগরি বুঝানো হয়ে থাকে?
বিআরটিএ যখন কোন গাড়িকে অনুমোদন দিয়ে থাকে, তখন গাড়ির ধরণ অনুসারে গাড়িকে একটি ক্যাটাগরিতে স্থান দেয়া হয়ে। কোন গাড়ি কোন ক্যাটাগরিতে পড়ছে, সেই ক্যাটাগরি অনুসারে গাড়ির জন্য একটি বর্ণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। নাম্বারপ্লেট প্রদানের ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র নিয়ম অনুসারে মোট ১৯টি ক্যাটাগরি রয়েছে। এর মধ্যে একটি ক্যাটাগরি হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গাড়ি, বাকি ১৮টি ক্যাটাগরিই জনসাধারণের গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
তাহলে জেনে নেয়া যাক ১৯টি ক্যাটাগরি সম্বন্ধে-
ক –
প্রাইভেটকার, ৮০০ সিসি’র প্রাইভেট কারের নাম্বারপ্লেটে ব্যবহার করা হয়ে থাকে বাংলা ব্যাঞ্জন বর্ণের প্রথম বর্ণটি।
খ –
প্রাইভেটকার, ১০০০-১৩০০ সিসি’র প্রাইভেট কার বুঝাতে নাম্বারপ্লেটে ‘খ’ লেখা থাকে।
গ –
প্রাইভেটকার, ১৫০০-১৮০০ সিসি’র যেসব প্রাইভেটকার রয়েছে সেগুলোর নাম্বারপ্লেটে খেয়াল করলে দেখা যাবে ‘গ’ বর্ণ দেয়া আছে।
ঘ –
জীপগাড়ি, জীপগাড়ির ক্যাটাগরি নির্ধারণের জন্য ‘ঘ’ বর্ণটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
চ –
মাইক্রোবাস, মাইক্রোবাসের নাম্বার প্লেটে ব্যবহার করা হয় বাংলা বর্ণমালার ৫ম বর্ণ ‘চ’।
ছ –
আবার ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস যেগুলো, সেগুলোর নাম্বার প্লেটে থাকে ‘ছ’। লেগুনার জন্যও এই বর্ণটি নির্ধারিত।
জ –
মিনিবাসের ক্যাটাগরি বুঝানোর জন্য নাম্বার প্লেটে ‘জ’ বর্ণটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ঝ –
বড় বাস বা কোস্টার বাসের ক্যাটাগরি বুঝাতে ব্যবহার করা হয় ‘ঝ’ বর্ণটি।
ট –
কোন গাড়ির নাম্বার প্লেটে যদি ‘ট’ বর্ণটি লেখা থাকে তাহলে বুঝতে হবে, এটা বড় ট্রাকের নাম্বার প্লেট।
ঠ –
নাম্বার প্লেটে ‘ঠ’ থাকলে বুঝতে হবে, নাম্বার প্লেটটি কোন ডাবল কেবিন পিক-আপ এর নাম্বার প্লেট।।
ড –
মাঝারি ট্রাকের নাম্বার প্লেটের দিকে খেয়াল করলে দেখবেন সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ড’ বর্ণটি।
ন –
কোন গাড়ি যদি ছোট পিক আপ ক্যাটাগরির হয়ে থাকে তাহলে নাম্বার প্লেটে ‘ন’ বর্ণ ব্যবহার করে ক্যাটাগরি নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে।
প –
ট্যাক্সি ক্যাবের জন্য নির্ধারিত ক্যাটাগরি। সাধারণত ট্যাক্সি ক্যাবের নাম্বার প্লেটে ‘প’ বর্ণটি থাকে।
ভ –
২০০০+ সিসি প্রাইভেটকার বুঝাতে গাড়ির নাম্বার প্লেটে শহরের নামের পর ‘ভ’ বর্ণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ম –
পণ্য পরিবহন এবং ডেলিভারির জন্য ব্যবহৃত পিক-আপ বুঝানোর জন্য বাংলা বর্ণমালার ‘ম’ বর্ণটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
দ –
প্রাইভেট বা নিজস্ব পরিবহনের জন্য যেসব প্রাইভেট সিএনজি চলাচল করে থাকে সেগুলোর নাম্বার প্লেটে ‘দ’ বর্ণটি ব্যবহার করা হয়।
থ –
ভাড়ায় চলিত সিএনজির ক্ষেত্রে ‘থ’ বর্ণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
হ –
৮০-১২৫ সিসি’র মোটরবাইক হয়ে থাকলে সেই বাইকের নাম্বারপ্লেটে ‘হ’ বর্ণ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
ল –
যদি কোন মোটরবাইক ১৩৫-২০০ সিসি’র হয়ে থাকে তাহলে সেই বাইকের নাম্বারপ্লেটে ‘ল’ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
ই –
ভটভটি টাইপের ট্রাকের নাম্বারপ্লেট অনুমোদন দেয়ার সময় তাতে ‘ই’ বর্ণটি দিয়ে ক্যাটাগরি ঠিক করে দেয়া হয়।
য-
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গাড়িগুলো চিহ্নিত করতে নাম্বার প্লেটে ‘য’ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এখন, কোন বর্ণ দিয়ে কোন ধরণের গাড়ি বুঝানো হয় তা জানা থাকলে শুধু নাম্বার প্লেট দেখেই ধারণা পাওয়া যায় গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, শহর, ইঞ্জিন প্রকৃতি সম্পর্কে। অনেক সময় গাড়ি ট্রেস করার জন্যও গাড়ির নাম্বার ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু গাড়ি ট্রেস করার সবচেয়ে সহজ এবং নিখুত উপায় হচ্ছে ভেহিকল ট্র্যাকিং সার্ভিস ব্যবহার করা। ভেহিকল ট্রাকিং সার্ভিস প্রহরীর মাধ্যমে খুব সহজেই ঘরে কিংবা অফিসে বসে গাড়ি ট্র্যাক এবং ট্রেস করা যায় দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা। যাতে গাড়ি থাকে সুরক্ষিত, যাত্রী থাকে নিরাপদে।
পার্বত্যকন্ঠনিউজ/রনি