প্রচণ্ড গরম ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে ১০ দিনের ব্যাবধানে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির সাজেকে বেটলিংয়ে আবারও ডায়রিয়ায় স্বামী-স্ত্রীর মুত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১৬ জুন) দুনগত রাত ৩টার দিকে তাদের মৃত্যু হয় বলে স্থানীয় মেম্বার বন বিহারী চাকমা নিশ্চিত করেছেন।
মৃত দুইজন হলেন- বাহন ত্রিপুরা (৫৫) ও তার স্ত্রী মেলাতি ত্রিপুরা (৫০)। এলাকায় আরও অর্ধশতাধিক আক্রান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ নিয়ে ১০ দিনের ব্যবধানে রাঙ্গামাটির সাজেকের শিয়ালদহ, ব্যাটলিং, রায়না পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় মোট ৪ জনের মৃত্যু ঘটে। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বন বিহারী চাকমা জানান, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম লংথিয়ান পাড়াসহ বেশ কয়েকটি পাড়ায় গত এক মাস ধরে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। গত ৭ জুন দুই জনের মৃত্যু হলে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যবিভাগ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মেডিক্যাল টিম চিকিৎসা সেবা দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। কিন্তু গত দুইদিন ধরে আবারও প্রকোপ দেখা দিলে স্বামী-স্ত্রী দুইজনের মুত্যু ঘটে।
তিনি জানান, বাহন ত্রিপুরার বাড়ি সাজেকের বেটলিংয়ে। তারা লংথিয়ান পাড়ায় ডাইরিয়ায় আক্রান্ত মেয়ের জামাইকে দেখতে এসেছিলেন।
এর আগে গত ৭ জুন বুধবার ভোর রাতে গবতি বালা ত্রিপুরা (৫০) ও দরুং ত্রিপুরা (৬০) দুজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত ১০ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাজেকে ৪ জন মৃত্যু বরন করে। লংথিয়ান পাড়ায় ও আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে নারী শিশু বৃদ্ধসহ আরও প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রয়েছে।
সাজেক ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার বনবিহারী চাকমা জানান গত এক মাস ধরে সাজেকের লংথিয়ান পাড়া, অরুণ পাড়া, কাইজা পাড়া, রায়না পাড়া ও শিয়ালদহ বেটলিং এলাকাসহ আশপাশের বেশকিছু এলাকায় নতুন করে ডাইরিয়ার প্রদুর্ভাব দেখা দেয়। এলাকায় আশপাশে কোনো হাসপাতাল বা কমিউনিটি ক্লিনিক না থাকায় স্থানীয় তান্ত্রিক দ্বারা চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এলাকায় যাতায়াতের কোনো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় পায়ে হেঁটে এতো দূর থেকে মাচালং ও উপজেলা সদর হাসপাতালে রোগী পাঠানো সম্ভব নয়।
গত ৮ জুন বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনের ৩টি মেডিক্যাল টিম টানা এক সাপ্তাহব্যাপী চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে। পরে গত বুধবার মেডিক্যাল টিম ফিরে যায়। এর মধ্যেই নতুন করে আরও দুজন গ্রামবাসীর মৃত্যু হলো। সাজেক ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার জোপুইথাং ত্রিপুরা জানান লংথিয়ান পাড়াতে চারজন মুমূর্ষু ডাইরিয়া রোগী রয়েছে তাদের অবস্থাও ভালো নয়। মূলত ছড়ার পানি থেকে এই রোগ ছড়িয়েছে।
২০১৬ সালে এখানে ডাইরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৬ জন মৃত্যু বরণ করেছেন। পরে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে মেডিক্যাল টিম দীর্ঘ এক মাসের চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে আসে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার ডাইরিয়ায় মৃত্যুর বিষয়টি শিকার করে জানান, সাজেকের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই, পাহাড়ী ছড়ার পানি পান করায় বর্ষার শুরুতে এই সমস্যা দেখা দেয়। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় চেষ্টা করছি সাজেকের দুর্গম অঞ্চলে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা দূর করতে। এ ছাড়া সাজেকে ডাইরিয়া প্রতিরোধে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের সাহায্যে সেনাবাহিনী বিজিবি ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকগণ সম্মিলিত চিকিৎসা সহায়তা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/এমএস
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত