বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ বিভাগের ঊর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল মোমিন পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ থেকে তিনি এ ডিগ্রি লাভ করেছেন।
ড. মোমিনের পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল ‘অ্যাডাপশন গ্যাপ অব ব্রি রিলিজ বোরো ভ্যারাইটিজ, টুয়ার্ডস ডেভেলপিং এন ইম্পিরিক্যাল অ্যাডাপশন মডেল’। গবেষণায় তার পিএইচডি উপদেষ্টা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন শেকৃবির কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মো. সেকান্দার আলী।
উপদেষ্টা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে গত ১১ জুন অনুষ্ঠিত সভায় পিএইচডি ডিজারটেশন উপস্থাপনা ও সাক্ষাৎকার শেষে তাকে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বোর্ডের সদস্যরা। উপদেষ্টা বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- শেকৃবির কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, ড. মাহবুবুল আলম এবং অ্যাগ্রি বিজনেস অনুষদের অধ্যাপক ড. মিজানুল হক কাজল। পিএইচডি থিসিসের চূড়ান্ত নিরীক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিম। এছাড়া দেশের বৃহৎ ৪টি বোরো উৎপাদনকারী জেলা কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল এবং বগুড়া জেলার অন্তর্গত ৪টি উপজেলার (মুরাদনগর, নান্দাইল, মির্জাপুর এবং শেরপুর) ১২টি ব্লকের ৩৭১ জন সিআইজি কৃষকদের ওপর পরিচালিত জরিপের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
দেশে বোরো মওসুমে ব্রি উদ্ভাবিত ১০টি নির্বাচিত বোরো জাতগুলোর অভিযোজন হার নির্ণয় এবং মাঠ পর্যায়ে এগুলো সম্প্রসারণের সমস্যা ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণসমূহ উদ্ঘাটনে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা যায়, ব্রি উদ্ভাবিত ব্রি ধান-২৮ ও ব্রি ধান-২৯ এখনো মাঠ পর্যায়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত। তবে ব্রি ধান-৮৮, ব্রি ধান-৮৯ অপেক্ষাকৃত নতুন জাত হলেও এ ২টি জাতের অভিযোজন অতি দ্রুত বাড়ছে। এ ২টি নতুন জাত মাঠ পর্যায়ে পুরনো জাতগুলোকে কার্যকরভাবে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হচ্ছে। তবে এজন্য প্রয়োজন বীজ ও উপকরণ সহায়তা। গবেষণা এলাকায় ব্রি উদ্ভাবিত নির্বাচিত ১০টি বোরো জাতের অভিযোজনের হার ছিল শতকরা ৭৭ ভাগ। অন্য জাতের অভিযোজনের হার ছিল ২৩ ভাগ। এ ২৩ ভাগ এলাকায় বর্তমানে ব্রি জাত বহির্ভূত দেশী-বিদেশী জাত চাষ হয়, যেখানে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বোরো জাতের আবাদ সম্প্রসারণের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
গবেষণায় পাওয়া ফলাফলে দেখা যায়, কৃষক পর্যায়ে নতুন জাত সম্প্রসারণে কৃষক কর্তৃক যে সব সমস্যার সম্মুখীন হন, সেগুলোর মধ্যে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে নতুন জাতের বীজ প্রাপ্তি সমস্যা। এছাড়া বোরো আবাদে ঋণ অপ্রতুলতা ও ঋণের প্রাপ্তি সমস্যা, সার-বীজসহ আবাদ উপকরণের উচ্চমূল্য, সময় মতো সেচের পানি না পাওয়া, নতুন জাত সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য না পাওয়াসহ ৩০টি সমস্যা চিহ্নিত করেছেন গবেষণা এলাকার কৃষকরা। এছাড়া এগুলো সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করণীয় বিষয়ে ৬টি পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এগুলোর মধ্যে প্রথমত- বীজ ও উপকরণের সহজলভ্যতা, বোরো আবাদে নির্বিঘ্ন ঋণ প্রাপ্তি, সেচ প্রণোদনা প্রদান, ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রির নিশ্চয়তা এবং সম্প্রসারণ ও ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কার্যকর সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকের সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন কৃষকরা।
কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুল মোমিন তার গবেষণার উপসংহারে মাঠ পর্যায়ে কৃষকের সমস্যা সমাধানে কৃষকদের পরামর্শগুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি জাত সম্প্রসারণ মডেল প্রস্তাব করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে- উপকরণ সহায়তা পেলে কৃষক পর্যায়ে নতুন জাত ও প্রযুক্তির অভিযোজন সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
ড. মো. আব্দুল মোমিন ১৯৮০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৫ সালে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিতে স্নাতক সম্মান এবং ২০০৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি যথাক্রমে ২০১১ এবং ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে মাস্টার্স (এমবিএ) ডিগ্রি অর্জন করেন।
এ গবেষক ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক যুগান্তরের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ছিলেন। এছাড়া ২০০৬ সালে আরেকটি পত্রিকা দৈনিক সমকালের সাব-এডিটর (কৃষি পাতা, ইনচার্জ) হিসেবে কাজ করেন। তিনি দৈনিক যায়যায়দিনে প্রায় দুইবছর সহ সম্পাদক পদে কাজ করেন। পরবর্তীতে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিতে (এমআরএ) পাবলিক রিলেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন প্রফেশনাল হিসেবে প্রায় দুইবছর চাকরি শেষে ৬ জানুয়ারি ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে যোগদান করেন। তিনি ‘ব্রি রাইস মিউজিয়াম’ নামে একটি কর্মসূচির পরিচালক হিসেবে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেন। যা দেশের প্রথম রাইস মিউজিয়াম।
ড. মোমিন একজন ফ্রিল্যান্স কৃষি সাংবাদিক এবং বাংলাদেশ বেতারের কৃষি কার্যক্রমের একজন নিয়মিত রিসোর্স পারসন। তিনি বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৬ সালে তিনি কৃষি সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য শের-ই-বাংলা পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৮ সালে তিনি পিএইচডি করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল থেকে ইন-কান্ট্রি স্কলারশিপ লাভ করেন। তিনি দেশে এবং বিদেশে সায়েন্স কমিউনিকেশনে বিষয়ে বেশ কয়েকটি পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ড. মোমিন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ নেটওয়ার্ক (বিএইএন), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (কেআইবি) আজীবন সদস্য। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রে তার পাঁচশতাধিক কৃষিবিষয়ক জনপ্রিয় নিবন্ধ এবং ধান ধ্যান ও বিজ্ঞান নামে তার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত