বান্দরবানের লামায় বিরল প্রজাতির এক উড়ুক্কু কাঠবিড়ালি উদ্ধার করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করছেন এক স্কুল শিক্ষক। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর ২০২০ইং) রাত ৬টায় আনুষ্ঠানিকভাবে লামা সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ নুরে আলম হাফিজ এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উড়ুক্কু কাঠবিড়ালিটি উদ্ধার করেন লামামুখ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর শুক্কুর। তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় লামা পৌরসভার মধুঝিরি এলাকায় বসতবাড়িতে পালিত একটি বড় সেগুন গাছ কাটছিল তার নিয়োগ করা কয়েকজন শ্রমিক। গাছটি কাটা হলে গাছের গর্তে লুকিয়ে ছিল ৩টি উড়ুক্কু কাঠবিড়ালি। এসময় ২টি উড়ুক্কু কাঠবিড়ালি উড়াল দিয়ে পালিয়ে যায়। ১টি উড়ুক্কু কাঠবিড়ালি চুপ করে বসে থাকে। তারা কাঠবিড়ালিকে উদ্ধার করে।
অদ্ভুত এই প্রাণীটিকে দেখতে ইচ্ছুক জনতা ভিড় জমায়। পরে রাত ৬টায় উড়ুক্কু কাঠবিড়ালিটি লামা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
লামা বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ নুরে আলম হাফিজ বলেন, আমরা বিরল উড়ুক্কু কাঠবিড়ালিটি আমাদের কাছে যত্ন করে রেখেছি। আগামীকাল চকরিয়ার ডুলহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে উড়ুক্কু কাঠবিড়ালিটি হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরো জানান, উড়ুক্কু কাঠবিড়ালীর কোনো পাখা নেই! কিন্তু পাখা না থাকলে কী হবে! ওরা কিন্তু ২০-৩০ মিটার খুব অনায়াসেই এগাছ থেকে ওগাছে অনেকটা ওড়ার ভঙ্গিতে ভেসে বেড়াতে পারে। ওদের ভেসে বেড়ানো দেখলে মনে হয় অনেকটা বাদুর ভেসে বেড়াচ্ছে।
আসলে ওদের শরীরে প্যাটাগিয়া নামের এক বিশেষ পর্দা থাকে। যা বাতাসে ফুলে ফেঁপে ওঠে। অনেকটা বেলুনের মতো। আর সেই পর্দাওয়ালা বেলুনের সাহায্যে ওরা কিছু সময় বেশ অনায়াসেই বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে। তবে ওদের সামনের পা দুটি কিন্তু পেছনের পা দুটি থেকে অনেকখানি ছোট। আর ঠিক সেটা থাকাতেই বিশেষ সুবিধা নেয় ওরা! মানে লাফ দিয়ে এগাছ থেকে ওগাছে চলে যায় ওরা।
সাধারণত ছোট জাতের উড়ুক্কুর দৈর্ঘ্য ৭-১০ সেন্টিমিটার অর্থাৎ (২.৮-৩.৯ ইঞ্চি) আর ওজন মাত্র ১০ গ্রাম! তবে লোটিয়ান এক জাতের উড়ুক্কু কাঠবিড়ালী আছে ১.০৮ মিটার (৩ ফুট)। উড়ুক্কু কাঠবিড়ালীর লোম অনেক নরম আর সংবেদনশীল। শরীরে মাঝে মাঝে ডোরা কাটা দাগও দেখা যায়। ওদের প্রধান খাদ্যই কিন্তু বাদাম আর লতাপাতা। তবে কিছু কিছু উড়ুক্কু কাঠবিড়ালী আবার ছোট ছোট পোকা মাকড় ধরেও খায়!
তবে সাইবেরিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল আসাম, দার্জিলিং প্রভৃতি স্থানে উড়ুক্কু কাঠবিড়ালী শ্রেণির কাঠবিড়ালী দেখা যায়। এদের সামনের পা দুখানা পেছনের পায়ের সঙ্গে পাতলা চামড়া দিয়ে কতকটা ডানার মতো করে জোড়া। তারই সাহায্যে বাতাসে ভর করে এগাছ থেকে ওগাছে উড়ে যাওয়ার মতো অনেকটা লাফিয়ে বেড়ায়। শুনে অবাক হতে হয়, এই উড়ুক্কু কাঠবিড়ালী কিন্তু নিশাচর প্রাণী! কিছু কিছু উড়ক্কু কাঠবিড়ালী ১০-২০ বছরের বেশি সময় পর্যন্ত বাঁচে!