মানবিক কাজে অংশ নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ প্রসংশা কুঁড়িয়েছেন আমি নই আমরাই সেবা সংঘ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাঘারপাড়া ব্লাড ব্যাংকের সহ সাধারণ সম্পাদক পরিমল বিশ্বাস।
যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর
ইউনিয়নে জন্ম পরিমল বিশ্বাসের ! পিতা স্বর্গীয় মুকুন্দ বিশ্বাস ও মাতা শ্রী মতি রাশমণি বিশ্বাস এর সন্তান পরিমল বিশ্বাস ।
আজকের পর্বটি সাজানো হয়েছে
পরিমল বিশ্বাস এর মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে!
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সাংবাদিক মেহেদী হাসান রিপন
প্রশ্ন: কবে থেকে এসব মহৎ কাজ করা শুরু করলেন এবং এর পিছনের গল্প কি ?
পরিমল বিশ্বাস : ছোটবেলা থেকেই বলতে গেলে ভালো কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছি।
আর ছোটবেলা থেকেই গ্রামে বড় হয়েছি তাই তাদের কষ্টগুলো খুব কাছ থেকে দেখে আসছিলাম। আর তখনই ভেবেছিলাম যে ভগবান যদি কখনো এনাদের জন্য কাজ করার তৌফিক দেন তবে আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাবো । আর এখন সবার সহযোগিতায় সেটাই করে যাচ্ছি মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত কি কি ধরণের কাজ সবচেয়ে বেশি করেছেন?
পরিমল বিশ্বাস : এখন পর্যন্ত রক্তদান চিকিৎসা ক্যাম্পের মাধ্যমে সহায়তা, শীতবস্ত্র বিতরণ,জায়নামাজ বিতরণ, ইফতার বিতরণ, মেধাবী শিক্ষার্থীদের বইখাতা কিনে দেয়া প্রভৃতি!
প্রশ্ন: ভালো কাজ করতে গিয়ে বিপদে পরেছিলেন কখনো?
পরিমল বিশ্বাস : না। এখন পর্যন্ত সৃষ্টিকর্তার আর্শিবাদে
তেমন কোনো বিপদে পরি নি। তবে কিছু মানুষ থাকেই যারা অন্যের ভালো কাজ গুলো ভালো ভাবে নিতে পারেনা। এবং সেই মানুষ গুলির সমালোচনা আমাকে দ্বিগুণ উদ্যমে কাজ করার শক্তি যুগিয়েছিলো। আমার দৃঢ বিশ্বাস তারা তাদের ভুল গুলি যেদিন উপলব্ধি করতে পারবে সেদিন তারাও আমার সঙ্গে মানবতার কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করে সমাজকে বদলে দিবে। তবে আমি আমার নিন্দুকদের কাছে কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত যেসব কাজ করেছেন তারমধ্যে স্মরণীয় কোনটি?
পরিমল বিশ্বাস : আমার প্রথম রক্তদানের আগে রাতে আমার এলাকায় রেকেট খেলা হচ্ছিল তার প্রধান অতিথি ছিলাম রাত ১২ টায় কল আসে রক্ত দিতে পারবো কিনা আমি হ্যাঁ বলার পরে বাড়ি এসে দেখি আমার বাবা খুব অসুস্থ সারা রাত বাবার পাশে বসা সকালে কোনো গাড়ি পায়নি তিন কিলোমিটার হেটে রক্ত দিতে গেছি সেদিন আমার মা খুব অসুস্থ তারপর ও মা আমাকে পাঠিয়েছে রক্ত দান করতে।
প্রশ্ন: আপনি মূলত সমাজের কোন শ্রেণির মানুষের জন্য কাজ করে থাকেন?
পরিমল বিশ্বাসঃ প্রতিবন্ধী গরীব এবং অসহায় মানুষ বিশেষ করে রক্তের প্রয়োজনে সর্বদা মানুষের পাশে
তাছাড়া সমাজের উন্নয়ন মূলক কাজে অংশগ্রহণ করাই আমার মূল লক্ষ্য
প্রশ্ন: আপনি এসব কাজে আর্থিক সহায়তা কিভাবে পেয়ে থাকেন?
পরিমল বিশ্বাস : ফেসবুক সবথেকে বড় মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তবে শুধু পোস্ট করে নয়, পার্সোনালি আমি আমার সিনিয়র,জুনিয়র, বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে বিষয় গুলো শেয়ার করেও টাকা সংগ্রহ করি। ভালো কাজে কারো কাছে হেল্প চাইতে কখনো দ্বিধা করিনি আজ পর্যন্ত।আমার মনে হতো হয়তো ওনাদের সঙ্গে শেয়ার করে ফান্ড সংগ্রহ করে অনেকের উপকার করা সম্ভব।
প্রশ্ন: উদ্যোগ নিয়েও সফল হতে পারেন নি এমন কোনো ঘটনা আছে কি?
পরিমল বিশ্বাস : এটি খুব আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই যে আজ পর্যন্ত এমন একটি ঘটনাও ঘটেনি কারণ আমি যখন একটা কাজ করবো বলে ঠিক করি তখন হাল ছেড়ে দেইনি কখনো। হয়তো দশ দিনের জায়গায় কুঁড়ি দিন লেগেছে তবে হাল ছেড়ে দেইনি। যে কোনো কাজ নির্ধারিত সময় ও রোডম্যাপ অনুযায়ী করেছি। আর এতেই সফল হয়েছি মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়। অনেক কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্পন্ন হয়ে যেতো ।
প্রশ্ন: আপনার এই সব কাজে সবচেয়ে সাপোর্ট কে বা কারা দেয়?
পরিমল বিশ্বাসঃ আমার মা-ভাই বোন । তাদের সাপোর্টেই আজকে আমি এতদূর আসতে পেরেছি।
আমার মা সব সময় আমার পাশে থাকে। যখন একেকটা কাজে সময় লেগে যেতো মা বলে চেষ্টা করো দেখো তুমি ঠিক পারবা। মায়ের প্রত্যেকটি কথা হয়তো আমার কাজের বড় সাপোর্ট হিসাবে কাজ করেছে।
প্রশ্ন: তরুণ সমাজের কাছে প্রত্যাশা কি?
পরিমল বিশ্বাস : তরুণ সমাজ চাইলেই অনেক কিছু করা সম্ভব। কারণ একটা কথা আমি সবসময় বলি আমরা হয়তো একা সবাইকে ভালো রাখতে পারবো না তবে সবাই মিলে চাইলে একজনকে অন্তত ভালো রাখতে পারবো। এবং সেই এক জন একজন হতে হতে সংখ্যাটা একদিন বিশাল বড় হয়ে যাবে। শুধু টাকা দিয়ে সহায়তা করতে হয় বিষয় টা এমন নয়। শ্রম আর ইচ্ছে থাকলেই সহায়তা করা সম্ভব। কারণ আমার ব্যাক্তিগত নিজের কোনো টাকা নেই। তবে ইচ্ছে আছে আর শ্রম দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত। আর যেটা এখনকার তরুণ সমাজ চাইলেই পারে।
প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
এখন যে কাজ গুলো ছোট পরিসরে চালিয়ে যাচ্ছি সৃষ্টিকর্তা সুযোগ করে দিলে এই কাজ গুলো আরো অনেক বড় পরিসরে করতে চাই । কারণ আমি স্বপ্ন দেখি সেই দিনের যেদিন একটা মানুষ ও রক্তের অভাবে মারা যাবে না এবং অন্তত না খেয়ে দিন কাটাবে না। কিন্তু তার জন্য দরকার সকলের সহযোগিতা আর সাপোর্ট।
মেহেদী হাসান রিপন : আপনার আগামীর কাজের জন্য শুভ কামনা রইল।
পরিমল বিশ্বাস : আপনাকেও ধন্যবাদ। আমি আবারো আমার কাজের জন্য সকলের সহযোগিতা ও দোয়া প্রার্থনা করছি।
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/এমএস