খাগড়াছড়িতে এখন উলু ফুল ( ঝাড়ু ফুল ) মৌসুম চলছে। এ পাহাড় থেকে পাশের পাহাড়ে গিয়ে উলু ফুল সংগ্রহ করছেন পাহাড়ি নারী-পুরুষরা। উলু ফুল লাভ জনক হওয়ায় পাহাড়িরা এখন বিভিন্ন ফল বাগানের সাথে আবার অনেকে শুধু উলু ফুলের বাগান করছেন। তাই পাহাড়িরা এখন সংগ্রহ করার পর স্থানীয় বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। আবার অনেক ব্যবসায়িরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে কিনেন।
এখন মৌসুমে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কাঁচা এই উলু ফুল সংগ্রহ করে শুকিয়ে রাখেন। তারপর ঝাড়ু ফুল ১৮-২০টি কাটি দিয়ে একটি আঁটি বাঁধেন। আর একটি আঁটি বিক্রি হয় ১৫ থেকে ১৮ টাকায়। খাগড়াছড়ি বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানায়, গত বছর ৩৩,৬০,৫০০ ধ্রুমে ১১,৭৬,১৭৫ টাকা রাজস্ব পেয়েছি। আর এ বছর ১৫ লাখ টার বেশি রাজস্ব পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, আগে প্রকৃতিভাবে হত। এখন তাঁরা সচেতন ভাবে গত দুই-এক বছর ধরে পাহাড়িরা চাষ করছে। বিনা পরিচর্যায় চাষ করা যায়। শুধু লাগিয়ে দিলেই হয়ে যাচ্ছে। এখানো কোন সার পানি কিটনাশক কিছুই লাগছে না।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার রিসাং ঝরনা এলাকার উলু ফুল চাষি আপন ত্রিপুরা বলেন, তিন-চার বছর আগে বন-জঙ্গল থেকে পাহাড়ি ছেলে-মেয়েরা কোঁজ করে সংগ্রহ করে দশ আঁটি করে বেঁধে ১ থেকে ২ টাকায় বিক্রি করত। আর এখন একটি কাটি ১ বিক্রি হয়। দাম বাড়ছে। উলু ফুলে সুন্দর জীবন চলে। পাহাড়ে কোঁজ করে বিক্রি করে দেখেন উলু ফুলে অনেক পয়সা। তাই তাঁরা আসতে আসতে এখন বাগান করছে। যার কাছে এখন পাঁচ একর দশ একর পাহাড় আছে তাঁরা বিভিন্ন ফলের বাগানে উলুফুলের বাগান করছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ি মোঃ ইউচুপ বলেন, গত বছর তুলনায় এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু মায়ারমার, ভারত থেকে উলুফুল আসায় আমাদের সমস্যা হচ্ছে। দেশের বাহিরের মাল ডুকায় পাহাড়ের উলুফুলের দাম কমে যাচ্ছে। বাহিরের পনের জন শ্রমিক নিয়ে তিন মাস এ ব্যবসা চলে। আমার এখান থেকে এক মৌসুমে বাইশ ট্রাক মাল যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ি আবদুল মান্নান বলেন, খাগড়াছড়ির সকল উপজেলা থেকে উলু ফুল সংগ্রহ করি। রোদে শুকায়। বিশ করে কাটি করে বাধা হয়। তাতে ২৩ থেকে ২৫ টাকায় দাম পায়। সারাদেশে বিক্রি করি। এক ট্রাকে ত্রিশ হাজার আটি ধরে। এক ট্রাকে ৯ লাখ টাকা পায়।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার হৃদয়মেম্বার পাড়া উলু ফুল চাষি রতন ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ে উলু ফুল প্রকৃতি ভাবে জন্মায়। শিকড় তোলে অন্য জায়গায় লাগানে উঠে। এ কারণে পাহাড়ে বাগান বাড়ছে। যাদের পাহাড় আছে তাঁরা উলু ফুলের বাগান করছেন প্রচুর। পাহাড়িরা দাম পাই না। পাহাড়িরা বড় ব্যসায়িদের কাছে বিক্রি করতে পারে না। স্থানীয় ব্যবসায়িদের কাছে বিক্রি করতে হয়। স্থানীয় ব্যবসায়িরা পাহাড়িদের কাছ থেকে কিনে।
খাগড়াছড়ি উলু ফুল ( ঝাড়ু ফুল ) সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ব্যবসায়ি মো. নাসির উদ্দিন বলেন, খাগড়াছড়ি জেলায় পাঁচশ স্থানীয় ব্যবসায়ি আছি। উলুফুল কাটা, বাধা, রোদে শুকানোসহ এখানে দুই হাজার শ্রমিক মাঠে কাজ করেন। তিনি বলেন, ইদানিং ভারত, মায়ারমার, নেপাল থেকে উলুফুল দেশে আসার কারণে এই ব্যবসাটা এখন হুমকির মুকে। তেমন একটা লাভের মুখ দেখছি না। আমরা সরকারকে অনুরোধ করি আমরা এ ব্যবসাতে ঠিকে থাকতে পারি এবং আমরা দরে রাখতে পারি। এটা আমাদের দেশিয় সম্পদ। এটার সাথে কয়েক হাজার মানুষ জরিত।
খাগড়াছড়ি উলু ফুল (ঝাড়ু ফুল ) সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ব্যবসায়ি মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ইদানিং মায়ারমার, ভারত,নেপাল থেকে উলুফুল আসার কারণে খাগড়াছড়ির উলুফুলের চাহিদা কমে গেছে। দেশে উৎপাদন হচ্ছে বাহিরের রাষ্ট্র থেকে আনা না হয়। দেশে চাহিদা আছে, উৎপাদনও আছে। বাহিরের রাষ্ট্র থেকে উলুফুল আসার কারণে ব্যবসায়িরা লাভবান হচ্ছি না।
দেশের ৬৪ জেলায় খাগড়াছড়ি থেকে পাঠাচ্ছি। খোলায় দৈনিক ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ জন শ্রমিক কাজ করে। এক ট্রাকে ৩২ হাজার উলুফুলে খরচ হয় ৮ লাখ টাকা। খাগড়াছড়ি থেকে এক মৌসুমে ৮০০ ট্রাক উলুফুল যায় সারাদেশে। তাতে ৪৮ কোটি টাকা উলুফুলের ব্যবসা হয়। জেলায় ৬০ থেকে ব্যবসা আছে। সারাদেশ থেকে পাঁচশ জন্য ব্যবসায়ী আছে।
টাঙ্গাইল পটলবাজার থেকে আসা উলুফুল ব্যবসায়ি নুরুল ইসলাম বলেন, উলুফুল কিনে ঢাকা নিয়ে যায়। ঢাকায় নিয়ে গিয়ে পাইকারি বিক্রি করি। খুবই লাভজনক ব্যবসা। এক মৌসুমে আমরা বিশ থেকে বাইশ ট্রাক মাল নিয়ে যায়। তিনি বলেন, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান থেকে উলুফুল সংগ্রহ করি।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, উলুফুল একটি লাভজনক ফসল। কৃষকরা বিভিন্ন ফল বাগানে আবাদ করছেন। এই উলুফুল সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। কৃষকদের মূল ফসলের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে তাঁরা বাড়তি আয় হচ্ছে।
তিনি বলেন, চাষিরা ফল বাগান থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সেখানে আমরা চেষ্টা করছি এর ফাঁকে-ফাঁকে কফি-বাজুবাদাম এই গাছগুলো লাগানো যায়কিনা কাজ করছি।
খাগড়াছড়ি বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, গত অর্থ বছরে খাগড়াছড়ি বনবিভাগ কর্তৃক ৩৩ লক্ষ ৬০ হাজার উলুফুলের বিপরিতে ১১ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করেন। চলতি অর্থ বছরে ৩৪ থেকে ৩৫ লক্ষ ব্রুম কালেকশন কবে বলে আশা করছি এবং প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা রাজস্ব পাব বলে আশা করি।
খাগড়াছড়ি জেলার সাম্প্রতি সময়ে বেশ কিছু ব্যক্তি উদ্যোগে উলুফুলের বাগান সিজন করা হয়েছে। আমরা আশাবাদি ভবিষ্যৎতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে এবং এই জেলা উলুফুল থেকে আরো বেশি রাজস্ব আদায়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং মানুষের কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা প্রতি বছর প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহন করি। বন, পরিবেশ বন্যপ্রানী সংরক্ষণ এই ধরনের জনসচেতনা মূলক অনুষ্ঠান করেছি। এ বছর করতে সেখানে এই উলুফুল চাষ বৃষ্টি করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি। ভবিষ্যঃতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
এম/এস
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত