বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির ১২ বছর পর বদলীর অফিস আদেশ পেয়েছেন একজন সহকারি শিক্ষক। শিক্ষা অফিসের এক গুণধর উচ্চমান সহকারি কাম হিসাব রক্ষক (ইউডিএ) তার ছোটবোন সহকারি শিক্ষককে এই বদলীর অফিস আদেশ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন। এমন তুললঘি কাণ্ড ঘটেছে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে।
স্থানীয় ৫৭ জন শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোতাহারা বেগমের পিতার বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের মালপুকুরিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মোঃ আব্দুস শুক্কুর, মায়ের নাম শফিকা বেগম। এ শিক্ষকের পিন নাম্বার ৯৯৪১৫০৭৯৩১৫০১। শিক্ষক তথ্যে তার প্রথম যোগদান দেয়া হয়েছে ২৩/০২/২০১১। তিনি দাখিল পাস করেন ২০১০ সালে।
মোতাহারা বেগমের বড় ভাই বিগত ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি আলীকদম উপজেলা শিক্ষা অফিসে উচ্চমান সহকারি কাম হিসাব রক্ষক পদে চাকুরীরত আছেন।
২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আলীকদম উপজেলায় ২০টি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের আওতায় এনে গেজেট প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় । ইউএনডিপি’র অর্থায়নে এ বিদ্যালয়গুলি ২০১০ সালে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয়। গেজেটভূক্ত ২০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে ‘পারাও পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’।
২০১০ সালে যখন ইউএনডিপি স্থানীয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয় তখন ‘মোতাহারা বেগম’ নামের কোন শিক্ষক ছিলেন না।
২০১৫ খ্রিস্টাব্দে এসব বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদ উদ্যোগ নেন। এসময় শিক্ষক তালিকা চূড়ান্তের কাজ হয়। তখন ক্ষমতার অপব্যবহার ও তথ্য গোপন করে মোতাহারা বেগমের বড় ভাই ইউডিএ মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন মোতাহারা বেগমের নাম শিক্ষক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন।
তিনি ‘রাইতুমনি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার স্ত্রী রিয়াজুল জান্নাত ও সহোদর ভাই মোঃ আব্বাস উদ্দিনকে, ‘পারাও পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার সহোদর বোন মোতাহারা বেগম কে, ‘মেনক্য মেনকক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার মামাতো ভাই আরিফ উল্যাহকে, ‘বিদ্যামনি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার ভাগ্নে মোজাম্মেল হককে শিক্ষক হিসেবে তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করে নেন। এসব বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয় ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল শিক্ষক গেজেট প্রকাশিত হয়।
জানা গেছে, এসব শিক্ষকরা ২০১১ শিক্ষাবর্ষ থেকে একদিনের জন্য এসব বিদ্যালয়ে হাজির ছিলেন না। এমনকি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট শিক্ষকগণের খসড়া গেজেট প্রকাশের সময় পর্যন্ত এবং ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল শিক্ষক নিয়োগের অফিস আদেশ প্রদানের তারিখ পর্যন্ত ছিলেন অনুপস্থিত। বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাজিরায় তাদের নামও নেই। এরমধ্যে সদ্য বদলী আদেশপ্রাপ্ত পারাও পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোতাহারা বেগমও ছিলেন অনুপস্থিত।
জানতে চাইলে রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চাহ্লাথোয়াই মার্মা বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ আদেশে মোতাহারা বেগম নামের একজন শিক্ষকের নাম আছে। তবে তিনি আমাদের বিদ্যালয়ে যখন ২০১১ সালে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় তখন থেকে অদ্যাবধি একদিনের জন্যও হাজির ছিলেন না। সে হিসেবে তিনি প্রায় ১২ বছর অনুপস্থিত রয়েছেন!
তিনি আরও বলেন,আমাদের বিদ্যালয়টি অতি দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে পাহাড়ি পথে দূরত্ব আনুমানিক ৫০কিলোমিটার। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৬০ জন শিক্ষার্থী আছে। এদের অধিকাংশই ম্রো সম্প্রদায়ের। মন্ত্রণালয় থেকে জারী করা শিক্ষক নিয়োগ আদেশে ৪ জন শিক্ষক থাকলেও একজনের যোগ্যতা কম থাকায় বর্তমানে ৩ জন শিক্ষক আছেন। এরমধ্যে মোতাহারা বেগম অদ্যাবধি অনুপস্থিত আছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের ২২/০২/২০২২ খ্রি. তারিখে ২৯.৩৫.০৩০০.০০৩.১৯.০৫২.(অংশ০৭).২৫২ স্মারকের প্রেক্ষিতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রি. তারিখ ৩৮.০১.০৩০০.০০০.১৯.০০১.২২.১৩ স্মারকে মোতাহারা বেগমকে পারাও পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে চৈক্ষ্যং ত্রিপুরা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলীর ‘অফিস আদেশ’ দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, যে শিক্ষক যোগদানের পর প্রায় ১২ বছর ধরে একনাগাড়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন তাকে শাস্তির আওতায় না এনে পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ কিভাবে অন্য একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলীর অফিস আদেশ দিলেন! তাছাড়া যে বিদ্যালয় থেকে বদলী করা হলো সে বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৩ জন।
উল্লেখ্য, সহকারি শিক্ষক মোতাহারা বেগম ও তার বড় ভাই ইউডিএ নাছিরের বিরুদ্ধে গত ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর স্থানীয় ৫৭ জন প্রধান ও সহকারি শিক্ষকের স্বাক্ষরে অভিযোগ পাঠানো হয় পার্বত্য জেলা পরিষদে। এ অভিযোগের এখনো সুষ্ঠু সুরাহা হয়নি। এরই মধ্যে সুচতুর ইউডিএ নাছির তার বোন মোতাহারা বেগমকে সুকৌশলে অন্য একটি বিদ্যালয়ে বদলীর আদেশ করিয়ে নেন।
এ বিষয়ে জানতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের ব্যক্তিগত তথ্যে দেওয়া মুঠোফোন নাম্বার ০১৮৮৯৬২৯৩৪৭ ফোন দিলে সুরেন্দ্র ত্রিপুরা নামের অপর একজন শিক্ষক জানান, এটি মোতাহারার নাম্বার নয়।
জানতে চাইলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে আলীকদম উপজেলা থেকে মনোনীত সদস্য দুংড়ি মং মার্মা বলেন, এ সংক্রান্ত বদলীর আদেশ নিয়ে আমি কিছু জানি না। কারা কিভাবে এ বদলী আদেশ করিয়েছে তা খোঁজখবর নেব।
এ ব্যাপারে শনিবার দুপুরে মুঠোফোনে বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সফিউল আলমের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘এ বদলীর বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এম/এস
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত