খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউপির ৮ নং ওয়ার্ড অধীনস্থ চংড়াছড়ি এলাকায় জমি ও সীমানা বিরোধ নিয়ে মোঃ হানিফ মিয়ার সৃজনকৃত ফলের বাগান কর্তন করার অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার মৃত হাতেম আলীর পুত্র মোঃ ছাত্তার আলীর বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, মোঃ হানিফ মিয়া তাঁর নিজ নামে বন্দোবস্তকৃত জমির মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আম, লটকন সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ লাগান। এমতাবস্থায় পাশ্ববর্তী মোঃ ছাত্তার আলী দীর্ঘদিন ধরে হানিফের নামে বন্দোবস্তকৃত জমির একাংশ নিজের বলে দাবি করে আসছে। সৃজনকৃত ফল বাগানের সীমানা নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ করে আসছে। তারই জের ধরে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী (শুক্রবার) রাতে হানিফের ৪০ শতাংশ জমিতে সৃজনকৃত প্রায় শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির ফল গাছ কর্তন, কাঁটাতারের বেড়া ও বাগানের ঘরটি ভেঙেচুরে নিয়ে যায়।
শুধু তাই নয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানায়, একই এলাকার বিভিন্ন জনের সাথে জমিজমা সহ বিভিন্ন ভাবে ঝামেলা ও অহেতুক মানুষকে অত্যাচার ও মারধর করে আসছে ছাত্তার।
ছাত্তারের এসব অসৌজন্যমূলক কর্মকান্ড নিয়ে সমাজের বিচারকগণ একাধিকবার সামাজিকভাবে সালিসে বসতে চাইলে ছাত্তার কখনো সালিসে উপস্থিত হতেন না। সামাজিক সিদ্ধান্তকে অসম্মান জানিয়ে উল্টো সামাজিক বিচারক ও ব্যক্তিবর্গদের বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে বলেও জানায় এলাকাবাসী।
বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র দিয়ে মানুষকে মারধর, হুমকি প্রদান সহ মাদক সেবন ও ব্যবসার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এমনকি কিছুদিন পূর্বে অভিযোগের পেক্ষিতে ছাত্তারের বাসা থেকে বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে উদ্ধারকৃত দাঁড়ালো অস্ত্রগুলো সমাজের দায়িত্বশীলদের কাছে আমানত রাখা হয়, যা স্বীকার করেন সামাজিক ব্যক্তিবর্গরা।
এছাড়াও সমাজ, চংড়াছড়ি আর্মিক্যাম্প, দীঘিনালা থানায় ছাত্তারের বিরুদ্ধে বিগত সময়ে একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত আসলে ছাত্তার পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী মোঃ হানিফ জানান, ছাত্তার আলী দীর্ঘদিন ধরে আমার নিজ নামে বন্দোবস্তকৃত জায়গার একাংশ নিজের দাবি করে আসছে। আমি সাধারণ মানুষ, ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালিয়ে কোনো মতে সংসার চালাই। অনেক কষ্ট করে শ্রমিক নিয়ে ৪০ শতাংশ জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির ফলের বাগান করি। গাছে ফুলও এসেছে। এমতাবস্থায় ছাত্তার আলী জায়গা ও সীমানা বিরোধের জের ধরে আমার ৪০ শতাংশ জমিতে সৃজনকৃত বাগান কেটে ফেলে এবং তারকাঁটার বেড়া, বাগানের ঘর ভেঙেচুরে নিয়ে যায়। এতে আমি প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সামাজিকভাবে বিচার দিলে সামাজের বিচারকগণের ডাকে সাড়া দেয়না ছাত্তার।
তদন্ত পূর্বক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের দাবিতে আইনের আশ্রয় নিবেন বলেও জানান ভুক্তভোগী হানিফ।
হানিফের ছেলে মোঃ নাহিদ বলেন, আমি গত ১৭ ফেব্রুয়ারী গভীর রাতে প্রাকৃতিক কারণ সারতে বাহিরে বের হলে দেখতে পাই ছাত্তার আলী আমাদের সৃজনকৃত ফল গাছ কেটে ও তারকাঁটার বেড়া ভেঙেচুরে নিয়ে যাচ্ছে।
হানিফের সৃজনকৃত বাগানের শ্রমিক মোঃ ছগির হোসেন জানান, আমিসহ ৩জন মিলে হানিফের বাগানে চারা রোপণ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কাজ করে আসছি। গাছে পানি ও ঔষধ দেয়া, চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া সহ যাবতীয় কাজগুলো করেছি। হঠাৎ সৃজনকৃত বাগানটি পাশ্ববর্তী ছাত্তার আলীর প্রতিহিংসার স্বীকার হওয়ায় আমরাও কষ্ট পেয়েছি। ছাত্তার আলী দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকার বহু মানুষকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার করে আসছে। সমাজের কোনো লোকদেরকে মূল্যায়ন করেনা ছাত্তার। অহেতুক মানুষকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়, ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখায়।
চংড়াছড়ি পুলিশিং কমিটির সভাপতি মোঃ ইউসুফ তালুকদার ছাত্তারের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, হানিফ মিয়ার নিজের নামে বন্দোবস্তকৃত জমিতে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ করে আসছে ছাত্তার আলী। বিষয়টি নিয়ে সামাজিকভাবে একাধিকবার বসতে চাইলে ছাত্তারকে ডেকে পাঠালে আসতে চাননা বরং সামাজিক বিচারকগনের সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করে, উল্টো বিচারকগনকে বিভিন্ন হুমকি দেন।
পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সামাজিক বিচারক মোঃ বাহাদুর ফরাজি বলেন, ছাত্তার আলীর বিরুদ্ধে মানুষের জায়গাজমি, সীমানা নিয়ে অহেতুক বিরোধ, অত্যাচার, মাদক সেবন ও ব্যবসা, ধারালো অস্ত্র দ্বারা মানুষকে মারধর করা ও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনকে হুমকি দেয়া সহ একাধিক অভিযোগের পেক্ষিতে ছাত্তারকে নিয়ে সামাজিকভাবে একাধিক বার বসতে চাইলে সে সামাজিক ব্যক্তিদের অসম্মান করে। উল্টো মারধরের হুমকি দেন। আমরা সামাজিক বিচারকগন সহ এলাকার সাধারণ মানুষ ছাত্তারের অসৌজন্যমূলক কর্মকান্ড ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। এমনি ছাত্তারের জন্য এলাকার বহু মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কিছুদিন পূর্বে ছাত্তারের বাসা থেকে বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এছাড়াও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বল্লে দুই-তৃতীয়াংশ লোকই ছাত্তারের প্রতি অসন্তুষ্টি জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্তার আলীর সাথে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
এম/এস
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত