জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করে পুরান ঢাকার সৈয়দ আওলাদ হোসেন লেনের শত কোটি টাকার জমি দখল করেছে একটি চক্র। প্রায় ১৭ শতক জায়গা পরিত্যক্ত সম্পত্তি হলেও একই নামে ভুয়া উত্তরাধিকার তৈরি করেন তাঁরা। এমনই একটি জমিতে ১০ তলা মার্কেট বানিয়ে দোকান বিক্রি করেছে নানা জনের কাছে। সম্প্রতি আদালতের বাদি হয়ে মামলা করার পর, তদন্তে এসব তথ্য পেয়েছে পিবিআই।
পুরান ঢাকার অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা সৈয়দ আওলাদ হোসেন লেন। এখানে ১৭ শতক জায়গার ওপরে তৈরি করা হয়েছে বিজনেস পয়েন্ট নামের মার্কেটি।
১৯৪৭ সালে এ জায়গার মূল মালিক ছিলেন রাধা বল্লভ দাস। তাঁর ২ ছেলে রমেশ চন্দ্র দাস ও যোগেশ চন্দ্র দাস। তাঁদের পুরুষ উত্তরাধিকার হিসেবে ছিলেন পলাশ চন্দ্র দাস আর জীবন চন্দ্র দাস। এরা মূল মালিক রাধা বল্লভ দাসের নাতি। এরা সবাই ভারতে চলে গেছেন। তাদের খোঁজ নেই। সরকারি দলিলদস্তাবেশে এ সম্পদ এসএ ও আর এস খতিয়ানে মালিক রাধা বল্লভের ওয়ারিশরা। কিন্তু সিটি জরিপের এ সম্পদের মালিক হয়ে যান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
এমন অবস্থায় ২০০৮ সালের পর হঠাৎ উপস্থিত হয় এদেরই ২ ওয়ারিশ। আদালতে মামলা করে এ সম্পদ তাদের নামে রেকর্ড ভুক্ত করেন। আদালতে সন্দেহ হলে এ ঘটনা তদন্তে বেরিয়ে আসে আসল সত্য। নারায়নগঞ্জের ভুইঘড়ের হরেন্দ্র নাথ হালদারের ছেলে নিখিল চন্দ্র হাওলাদার তার নাম পরিবর্তন করে হয়ে যান জীবন কৃষ্ণ দাস। আর একি এলাকার গোরাঙ্গ চন্দ্র দাসের ছেলে মানিক চন্দ্র দাস হয়ে যান পলাশ চন্দ্র দাস। মুল উত্তরাধিকারের চাচা ভাতিজা সম্পর্ক হলেও প্রতারকরা ভাই সম্পর্ক নিয়ে মাঠে নামে। এরা এ প্রতারণার অংশ হিসেবে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের ন্যাশনাল আইডি কার্ড পরিবর্তন করে। তাদের রয়েছে দুই নামে দুটি আইডি কার্ড।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, জমিটি একজনের দখলে থাকলেও মালিকানা ছিল না। পরে প্রতারক যোগাড় করা হয়েছে। যার দখলে ছিল তিনিই মেনে নেন যে প্রতারকরা মূল মালিক।
এ জমি দখলের জন্য প্রতারকরা ভোগ দখলকারীদের মধ্যে ডাক্তার জহির আহম্মেদের সঙ্গে ২ কোটি টাকা লেনদেন করেন। তাঁরা সরকারি সব কাগজ প্রতারণার মাধ্যমে নকল করেছে। এমনকি জমির খাজনা খারিজ ও করেছেন। এ ঘটনার মুল হোতা হিসেবে আছেন বর্তমান দখলদার মৌবন হোল্ডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচলাক মোহাম্মদ আবু তাহের। ৭৩ হাজার স্কায়রে ফিটের এ মার্কেটটি তিনি বিভিন্ন দোকানদারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এছাড়া প্রতিমাসে তিনি জমিদারে সেলামী নামে টাকা ওঠান। তাঁর বুদ্ধি ও টাকার জোরে ভুয়া হিন্দুকে আদালতে দেখিয়ে জমির কাগজ প্রতারণা করেন। তবে এখনও দায় স্বীকার করতে রাজি নন তিনি।
এ নিয়ে অভিযুক্ত মোহাম্মদ আবু তাহের তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ জমি নিয়ে অন্তত ৬ টি মামলা চলমান। আবু তাহেরের চক্র ছাড়াও আরো ২ টি চক্র জমিটি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। যাদের সবার কাগজই ভুয়া।