• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম
অবৈধ দখলদার হতে ময়লা ডাম্পিং ও সেড নির্মাণের জায়গা উদ্ধারে মানববন্ধন কাপ্তাই উপজেলা সদরে হাঁসের খামারে ধরা পড়লো ১৪ ফুট লম্বা অজগর : কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত  কাপ্তাই লেকে পানি স্বল্পতায় কাপ্তাই-  বিলাইছড়ি নৌ রুটে  নৌ চলাচল ব্যাহত বান্দরবানের রুমায় সেনা অভিযানে কেএনএ সন্ত্রাসী নিহত খাগড়াছড়ি জেলা পু‌লিশের সকল স্ত‌রে শ্রেষ্ঠ হয়েছে মাটিরাঙ্গা সা‌র্কেল ও থানা কাপ্তাইয়ে উপকারভোগীদের মাঝে ঋণের চেক বিতরণ  গোয়ালন্দে গণহত্যাকাণ্ডে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন মানিকছড়িতপ ইয়ুথ দলের অভিজ্ঞতা বিনিময় ত্রৈমাসিক সভা অনুষ্টিত বান্দরবানে যৌথ অভিযানে গণগ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধে মানিকছড়িতে পিসিপি’র বিক্ষোভ মিছিল পানছড়ি উপজেলা নির্বাচনে ১৩ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল

পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি রমরমা

অলিউল্লাহ রাজশাহীঃ / ৪৫১ জন পড়েছেন
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১

দেশের অন্যতম মাদকের ট্রানজিট রাজশাহী গোদাগাড়ী। সীমান্ত গলিয়ে নানান কৌশলে ঢুকছে মাদকের চালান। মাঝেমধ্যে আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযানে কিছু ধরাও পড়ছে। কিছু চালান পৌঁছে যাচ্ছে গন্তব্যে।

মাদক কারবারে যুক্ত এখানকার বিভিন্ন বয়সি মানুষ। অবৈধ এই কারবারে জড়িয়ে শূণ্য থেকে কোটিপতি বনে গেছেন এমন লোকের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। এককথায় হাতে অঢেল টাকা।

এসব মাদক ব্যবসায়ীকে টার্গেট করে এলাকায় গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজ চক্র। হালের অনলাইন জুয়ায় জড়িতদের টার্গেট করছে চক্রটি। পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা টাকা।

এই চক্রের ফাঁদে আটকে মোটা টাকা খুঁয়েছেন এমন কয়েকজন জানিয়েছেন , চক্রটি প্রথমে কথিত গণমাধ্যমকর্মীদের দিয়ে অনলাইন সংবাদ প্রকাশ করায়। এরপর পুলিশের ভয় দেখায়। পরে পুলিশকে ম্যানেজ করার নামে মোটা টাকা হাতিয়ে নেয়।

কখনো কখনো এই চক্রে কতিপয় পুলিশ সদস্য যুক্ত হন। ফিটিং কেস, মামলা হালকা করা এমনকি ধরা-ছাড়া বাণিজ্য হয় এই চক্রের হাতঘুরে। এই কারবারে যুক্ত অনেকেই ফুলে ফেঁপে উঠেছেন।

এদিকে, গত ১ আগস্ট রাজশাহীর একটি অনলাইন সংবাদপত্রে গোদাগাড়ীতে অনলাইন জুয়ার কারবার নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। তাতে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির নাম আসে। এরপর থানার ওসিকে সেই খবরের লিংক পাঠিয়ে জুয়ায় যুক্তদের পাকড়াও করা হবে কি না জানতে চান প্রতিবেদক আবদুল বাতেন।

ওসি নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও সেই খবরের লিংক পান। এরপর নাম ধরে ধরে প্রত্যেকের বাসায় পুলিশ পাঠিয়ে খোঁজ নেন ওসি। পুলিশ যায় খবরে উল্লেখ করা জুয়ার আখড়াগুলোতে। কিন্তু কোথাও কারো হদিস পায়নি পুলিশ। কিন্তু পুলিশের নাম ভঙিয়ে পালিয়ে থাকা ছয় জুয়ারির কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পুলিশের তৎপরতার খবর তাদের কাছে পৌঁছে দেন কথিত সোর্স ফরহাদ হোসেন। পরে পুলিশকে যে কোনো মূল্যে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন তারা। শেষে ছয়জন মিলে ফরহাদের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা করে দেড় লাখ টাকা কথিত সাংবাদিক বাতেনকে দেয়া হয়েছে।বাতেনের বিরুদ্ধে গত দু বছর আগেও চাঁদাবাজির অভিযোগে একাধিক নিউজ প্রকাশ হয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করে এদের একজন জানিয়েছেন, খবর পেয়ে তিনি এক ঘনিষ্টজনের মাধ্যমে প্রতিবেদক আবদুল বাতেনের সাথে যোগাযোগ করেন। ওই সময় বাতেন তাকে জানান, পুলিশ তাদের তালিকা তৈরী করেছে। ওই তালিকা থেকে নাম কাটাতে ৫ লাখ টাকা লাগবে।

তিনি সেই টাকা দিতে অপরাগতা জানান। শেষে ২৫ হাজার টাকায় বিষয়টি রফাদফা করতে রাজি হন বাতেন। পরে তার সোর্স ফরহাদ হোসেনকে তিনি ২৫ হাজার টাকা পৌঁছে দিয়েছেন ভুক্তভোগী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, পুলিশী তৎপরতার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এসময় ফরহাদ হোসেন তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, থানার ওসির সাথে সরাসরি সাংবাদিক বাতেনের কথা হয়েছে। ছয় জনের নাম কাটাতে ২৫ হাজার টাকা করে দেড় লাখ টাকা লাগবে।

ফরহাদের ফোন থেকে এক পর্যায়ে কথা বলেন আরেক ভুক্তভোগী। তিনি প্রশ্ন করেন খবরে তো অনেকের নাম আছে, তারাই কেনো শুধু টাকা দেবেন? ওই ভুক্তভোগী জানান-তারা কেবল নিজেদের নাম কাটাতে চান। কথামত এলাকার মোড়ে ফরহাদের হাতে তিনি তার ভাগের ২৫ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন। ছয়জনে তারা দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী।

তবে পুলিশের ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফরহাদ হোসেন। তার বাদি, স্থানীয় সংবাদিক আবদুল বাতেনকে তিনি চেনেননা। তাছাড়া তিনি এমন কাণ্ডে যুক্ত নন। তাকে ফাঁসাতে এই অভিযাগ আনা হচ্ছে।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, ফরহাদ হোসেন এলাকার পৌর এলাকার মাদারপুর ডিমভাঙা এলাকার বাসিন্দা।পিতা এনামুল হক ওরফে হিঁচু। ডিমভাঙা মোড়ে তাদের একটি দোকান রয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার-জ্বালানী তেলসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন। এই দোকানের আড়ালে ফরহাদ যুক্ত মাদক ব্যবসায়। অনলাইন জুয়াতেও যুক্ত তিনি। নিজের কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্ন করতে কথিত সাংবাদিকদের র্সোস হিসেবে কাজও করেন ফরহাদ।

মাদক কারবারে নিজের সম্পৃক্তরা কথা অস্বীকার করেন ফরহাদ। তবে একটু-আধটু অনলাইন জুয়া খেলার কথা স্বীকার করেন তিনি।

এদিকে, পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক আবদুল বাতেন। তিনি দাবি করেন, এলাকার নানান অপরাধ-অপকর্ম রুখতে তিনি সোচ্চার। আর এ জন্য একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ফরহাদকে তিনি চেনেননা। কখনো তার সাথে দেখা হয়নি।

জানতে চাইলে টাকা নিয়ে জুয়ার কারবারীদের ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সেদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ওই খবর পান।

পরে ওই সাংবাদিকও তাকে ফোন দিয়ে আমরা কি ব্যবস্থা নিচ্ছি জানতে চান। পরে পুলিশ পাঠিয়ে বাড়ি বাড়ি খোঁজ নিয়ে কাউকে পাওয় যায়নি। অনলাইন জুয়ার আলামত না পাওয়ায় সেখানেই থেমে যেতে হয় পুলিশকে।

ওসি আরও জানান, তারা সেদিন কোনো তালিকা তৈরী করেননি। ফলে টাকা নিয়ে তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়ার প্রশ্ন ওঠেনা। হয়তো পুলিশের নাম ভাঙিয়ে কেউ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

বিষয়টি এমনই ঘটে থাকতে পারে বলে অনুমান করছে জেলা পুলিশও। জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম জানান, আমরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ