মঙ্গলবার (১৮আগষ্ট) সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় তার মেয়ের বাসায় মারা যান তিনি। পারিবারিক সূত্র তার মৃত্যুর বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে তার বড় মেয়ের বাসায় আত্মগোপনে থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, ১৯৭১ সালে আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার মঠবাড়িয়ায় পিস কমিটির চেয়ারম্যান হয়ে বিশাল এক রাজাকার বাহিনী গড়ে তুলে স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট চালিয়েছিলেন। আর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তিনি ২০১৫ সালে আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত হিসাবে দণ্ডিত হন। ওই মামলা দায়েরের আগেই তিনি দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। গত দশ বছর ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক অবস্থায় ছিলেন।

তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় মঠবাড়িয়ায় ৩৬ জন মুক্তিকামী মানুয়ের ওপর গণহত্যা, ২০০ জনকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা ও ৫৫৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করাসহ ৫টি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সেক্টর কমান্ডার ঘোষিত ৫০ যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় জব্বার ইঞ্জিনিয়ার এর নাম রয়েছে।

জানা গেছে, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল জব্বারের উপজেলার টিকিকটা ইউনিয়নের সূর্যমণি গ্রামের ২৪ হিন্দু নারী-পুরুষকে গণহত্যার দায়ে ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজাকার জব্বার ইঞ্জিনিয়ারসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই সময়ে সূর্যমণিতে রাজাকারদের গুলি খেয়ে বেঁচে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত জ্ঞানেন্দ্র মিত্র (৬২) বাদী হয়ে মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

মামলায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের সাবেক এমপি আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ারকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের নামে মামলা করা হয়। এছাড়া মামলায় আরো ৬০/৬৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

ওই বছর ২১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুানালে মামলা স্থানান্তরিত হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী পাঁচ ধরনের অভিযোগে ২০১৪ সালের ১ মে অভিযোগ দাখিল করেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। পরে ওই বছরের ১২ মে ইঞ্জিনিয়ার জব্বারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। তবে এর আগে ২০১০ সালে তিনি গোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আত্মগোপন করেন।

২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এনায়েতুর রহীম এর নেতৃত্বাধিন গঠিত ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালতে পলাতক যুদ্ধাপরাধী আব্দুল জব্বারের আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।